বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকিতে কারা, কীভাবে বুঝবেন আক্রান্ত

  •    
  • ২৮ মে, ২০২১ ০৮:২৫

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেন গ্রহণ করেছেন- এদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

করোনা মাহামারি মধ্যে কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়ালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ছোঁয়াচে না হওয়ায় সুরক্ষার সুযোগ তুলনামূলক বেশি।

করোনার মতো লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করবে না এই রোগ। ঝুঁকিতে তারাই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কম।

রোগটির ওষুধ আছে আর তা উৎপাদন হয় বাংলাদেশেই। যদিও চাহিদা বাড়লে সেই কোম্পানিটি চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে আছে সংশয়।

করোনা মহামারিতে নাজেহাল ভারতে ব্যাপক হারে দেখা গেছে এই ছত্রাকের সংক্রমণ। দেখা মিলছে দেশেও।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগটি মিউকরমাইকোসিস নামে পরিচিত।

মঙ্গলবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ নিয়ে দেশে একজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে আরও দুইজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, এটি দেশে নতুন কোনো ছত্রাক নয়। এটি আগেও ছিল। তবে সম্প্রতি ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে মহামারি ঘোষণার পর আলোচনা বেশি হচ্ছে।

ঝুঁকি যাদের বেশি

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস বিভাগের চিকিৎসক ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ নিউজবাংলাকে বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেন গ্রহণ করেছেন- এদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি।

এর বাইরে কিটো অ্যাসিডোসিস আক্রান্তরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী, অতিরিক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, অন্তঃসত্ত্বা, অত্যধিক স্টেরয়েড গ্রহণ করা, কিডনি বা অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগী এবং চরম অপুষ্টিজনিত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মিউকরমাইকোসিস আক্রান্ত রোগীদের ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ রোগী মৃত্যুবরণ করে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পরিবেশে সব সময়ই থাকে। থাকে মানুষের শরীরেও। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে এটা রোগ হিসেবে দেখা দেয়।

বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

তিনি জানান, এই ছত্রাক নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কে আক্রমণ করে।

যেভাবে বুঝবেন আক্রান্ত

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেহের বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষত করতে পারে, সাধারণত বেশি নাকে ক্ষত তৈরি করে।

মাথা ও নাকব্যথা থাকতে পারে। নাকে বেশি ক্ষত হলে সেখান থেকে রক্ত আসতে শুরু করে। আস্তে আস্তে এটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

এটা ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে উঠে আসে। তখন রোগীর মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলে। এটা ফুসফুসেও ক্ষত তৈরি করতে পারে।

ফুসফুসে ক্ষত হলে নিউমোনিয়া বেশি দেখা দেয়। কাশি থাকে, রক্তও আসতে পারে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

চোখে অনেক সময় এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ে। তখন দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

চেহারাতেও এই ছত্রাক ক্ষত তৈরি করতে পারে। চেহারায় আক্রান্ত হলে চেহারার রং পরিবর্তন হতে পারে। যদি দ্রুত সময়ে এই ছত্রাক শনাক্ত না করা হয় তাহলে চোখ তুলে ফেলতে হয়।

এ ছাড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, নাক বন্ধ, সর্দি এই ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ।

শ্বাসকষ্ট, মুখের একদিকে ফুলে যাওয়া, নাক অথবা দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে যাওয়া, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, রক্তবমি, নতুন করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ, মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, স্কিনে কালো দাগ দেখা দেয়।

সুরক্ষার উপায়

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) জুনিয়র চিকিৎসক তাসনিম জারা বলেন, ফাঙ্গাসগুলো মাটি, পানি, বাতাসে মিশে থাকে। অনেকভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু যতজনের শরীরে এই ফাঙ্গাস ঢুকে সবাইকে আক্রান্ত করে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরে যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে সেটা ফাঙ্গাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে। অধিকাংশ সময় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এই ফাঙ্গাস ধ্বংস করে। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।’

স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ নিজে নিজে না খাওয়া, যেসব স্থানে অনেক ধুলাবালি বা বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে, এমন সব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।

মাটিতে হাত দেয়ার আগে হ্যান্ড গ্লাভস পরে নেয়া, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন এই চিকিৎসক।

যেভাবে দেয়া হয় চিকিৎসা

ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী বলেন, চিকিৎসাটা চার ভাগে করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে প্রথমে সেটি নিয়ন্ত্রণে নিতে হয়। রোগী আগে থেকে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে সেটিও অনেক কমিয়ে দিতে হবে।

এমন কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর ওষুধও দিতে হয়। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে সেসব ওষুধও বন্ধ রাখতে হয়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসবিরোধী একটি ইনজেকশন আছে। সেটি প্রয়োগের পাশাপাশি কোনো স্থানে যদি ক্ষত তৈরি হয়, সেই ক্ষতটি কেটে ফেলতে হয়। চোখে ক্ষত হলে চোখও তুলে ফেলতে হয়।

নার্জাল এন্ডোস্কোপি করে যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়, তাহলে বিদ্যুতের শকও দেয়া হয়।

ছোঁয়াচে নয়

কিছুটা স্বস্তির বার্তা হলো, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘পারসন টু পারসন’ অর্থাৎ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তার পরেও সতর্ক থাকতে হবে এই ছত্রাক নিয়ে।

বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যে কেবল করোনার কারণেই হবে, সেটা নয়। ‘হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড’ ইনফেকশনও হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীদের পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং দরকার না হলে স্টেরয়েড ও অক্সিজেন না দেয়ার মতো কাজগুলো করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর