রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে আসা স্বজনরা কেউ মাস্ক পরে আছেন, কেউ ঘুরছেন খালি মুখে।
বিষয়টি নিয়ে হতাশ খোদ হাসপাতালের পরিচালক। তিনি জানান, শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা নন, পিপিই পরার কথা তাদের স্বজনদেরও। কিন্তু তারা কেউ পরছেন না।
মানুষ এখন করোনা নিয়ে আর ভয় পায় না, এমন মূল্যায়ন করেছেন এই কর্মকর্তা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মরিয়ম বিবি। তার সঙ্গে আছেন দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
ছেলে রফিকুল ইসলাম বাইরেও যাচ্ছেন প্রয়োজনে। ওষুধপত্র কিনতে হাসপাতালের প্রধান ফটক হয়ে তাকে যেতে হয়।
গোলেস আরা বিবির চিকিৎসা চলছে আইসিইউতে। তার সঙ্গে আছেন তিনজন।
তার ছেলে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা অনেকটা ঘুরে বাহির পথ দিয়ে চলাচল করছি। আমাদের এখানে রোগীর চাপও বেশি। এখানে রাতে পাশাপাশি মেঝেতে ঘুমাতেও হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি থাকছে।’
গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রোগটি নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি ছিল ব্যাপক। স্বজনরাও কাছে যেতে চাননি। তবে এক বছরের মাথায় উল্টো চিত্র।
ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো উপেক্ষা করছে মানুষ। খোদ রাজশাহীর প্রধান এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেই দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অনীহা। এ নিয়ে শঙ্কাও আছে সচেতনদের মধ্যে।
বাবাকে ভর্তি করেছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে অনেকেই মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছেন। আবার তারাই রোগীদের সেবা করছেন। এটি নিয়ে আমাদের ঝুঁকি বেশি হচ্ছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকছি। ফলে আমাদের এখানে সাবধানে চলতে হচ্ছে। এত সাবধানে থেকেও লাভ হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি থাকছে। কিন্তু কী আর করার? নিরুপায় আমরা।’
যে চিত্র দেখা গেল হাসপাতাল ঘুরে
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীর স্বজনদেরও চলতে হচ্ছে একজন আরেকজনের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে। অনেকেই রাতে ঘুমাচ্ছেন করোনা ওয়ার্ডের বারান্দায়। তাদের সামনে দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন সাধারণ ওয়ার্ডের রোগীর স্বজনরা।
করোনা রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য হাসপাতালের পেছনের দিক দিয়ে একটি গেট খোলা থাকলেও স্বজনরা সেটি ব্যবহার করেন না। ওষুধ কেনাসহ ব্যক্তিগত কাজের জন্য তারা হাসপাতালের মূল ফটক ব্যবহার করেন। সাধারণ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে পাশাপাশি চলেন।
হতাশ হাসপাতালের পরিচালক
হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘যারা ওয়ার্ডে ভেতরে যাবেন, তারা পিপিই পরবেন। এটি বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকে এটি মানছেন না। এটি ভয়ংকর। আমরা এটি নিয়ে ভাবছিলাম।
‘মানুষ এখন করোনা ভয় পায় না। তারা অনেকেই বলে, মাস্ক পরলেই হয়, হাত ধুয়ে নিলেই হয়। মুশকিল হচ্ছে মানুষের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি নাই।’
ঈদের পর যে পরিস্থিতি
ঈদের পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিত্র ভয়াবহ হিসেবে চিহ্নিত করে জেলায় কঠোর লকডাউন পালন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ সমলানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জের রোগীরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। গত কয়েক দিনে বাড়তি চাপ চলছে এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে।
রোগীর সঙ্গে সেখানে থাকছেন স্বজনরা। প্রয়োজনে তারা ওয়ার্ড থেকে বের হচ্ছেন। কে কোন রোগীর স্বজন, তা বোঝার উপায় নেই। তাই তারা এখন হাসপাতালে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হলেও সংক্রমণের ঝুঁকি কমছে না স্বজনদের কারণে।
মঙ্গলবার রাতে করোনা ওয়ার্ডে তিনজন মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন মারা যান ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ২২ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও আরও একজন করে মারা যান।
বুধবার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) অন্যান্য ওয়ার্ডে ১৬২ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এদের মধ্যে ৬১ জনের করোনা পজিটিভ। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি। তাদের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
হাসপাতালে এখন আটটি ওয়ার্ডে চলছে করোনার চিকিৎসা। ওয়ার্ডগুলো হলো-১৬, ২২, ২৫, ২৭, ২৯, ৩০, ৩৯ ও ৪০। এ ছাড়া কয়েকটি কেবিন ও আইসিইউতে করোনা রোগী ভর্তি করা হয়।