করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে নতুন আতঙ্কের নাম কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। মহামারিতে নাজেহাল ভারতে ব্যাপক হারে দেখা গেছে এই ছত্রাকের সংক্রমণ। দেশে অন্তত দুজনের দেহে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে।
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লাভলি বাড়ৈ মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন এমন অন্তত দুজনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
শনাক্তের বিষয়ে লাভলি বাড়ৈ বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক চিহ্নিত করার জন্য কিছু লক্ষণ থাকে। তখন থেকে আমরা আইডেন্টিফিকেশন করেছি। এটা এমন না দেশে প্রথম শনাক্ত হয়েছে। ডায়াবেটিস পেশেন্টের এই ইনফেকশন (সংক্রমণ) থাকে।’
তিনি বলেন, ‘যখন একজন বয়স্ক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন যথেচ্ছভাবে স্টেরয়েডের ব্যবহারের কারণেও তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
‘শুধু যে ফাঙ্গাস এটা নয়। মারাত্মক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এটা হয়েছে। এ ছাড়া আরও সমস্যা দেখা দিচ্ছে রোগীর শরীরে।’
সমাধান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়ে গেলে তো ওষুধের মাধ্যমে রোগ নিবারণ করতে হবে। তবে এটা না হয় আগে প্রতিরোধ করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। একটি মাস্ক একাধিকবার পরতে হলে সাবানপানি দিয়ে পরিষ্কার করে পরতে হবে।’
এর আগে এই রোগ যেন বাংলাদেশে না আসতে পারে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্কতা জারি করে।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘কালো ছত্রাকের বিষয়ে করোনা প্রতিরোধে গঠিত কারিগরি পরামর্শক কমিটিকে বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। তারা একটি পরামর্শ চূড়ান্ত করবেন। এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি নিজেদের মধ্যে। এরই মধ্যে আমরা সারা দেশে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি।
‘আনুষ্ঠানিকভাবে কালো ছত্রাকের চিকিৎসাব্যবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো হবে।’
করোনা মহামারির মধ্যে ভারতের মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তেলেঙ্গানায় কালো ছত্রাকের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে কয়েক শ মানুষের। সাধারণত করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কিছু রোগীকে এই ছত্রাকে সংক্রমিত হতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা থেকে একে ছয় রাজ্যে মহামারি ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্র সরকার।
করোনা রোগীদের মধ্যে এমন সংক্রমণের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়ায় তাদের চিকিৎসায় স্টেরয়েডের ব্যবহার কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস।
নাকে কালো ছোপ, চোখে ঝাপসা দেখা, নাক বন্ধ, সর্দি এই ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ। আবার নাক দিয়ে কালচে কফ বের হওয়া, নাকের ভেতরের অংশ কালো হয়ে যাওয়া, মুখ ও গালে ব্যথা থাকতে পারে। সংক্রমণ বেশি ছড়ালে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।