দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত টিকা বিবিআইবিপি-করভির প্রয়োগ শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার।
দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এ টিকা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএসের ছাত্রী অনন্যা সালাম সমতা।
তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্রী। তার রোল ৫৯। রাজধানীতে মায়ের সঙ্গে থাকেন ধানমন্ডিতে। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর নওগাঁ জেলায়।
প্রথম টিকা নেয়ার বিষয়ে নিউজবাংলাকে সমতা বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলা হয়েছে আগামীকাল টিকা দেয়া হবে। আমি প্রথম টিকা নিচ্ছি এটা ক্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’
প্রথম টিকা নেয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের হয়ে চীনের টিকা প্রথম নিচ্ছি আমি। এটা অবশ্যই আনন্দের বিষয়। এ ছাড়া করোনা প্রতিরোধে সবাইকে বিনা মূল্যে টিকার ব্যবস্থা করেছে সরকার। সেই টিকা সবাইকে নিতে হবে।’
টিকা নিয়ে শুরুতেই এক ধরনের আতঙ্ক ছিল। এখনও সেটা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মধ্যে তেমন কোনো শঙ্কা-ভয় কাজ করছে না। কারণ মানুষের সেবাই আমাদের কাজ। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ব্যবহারিক ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এ জন্য আমরা হাসপাতালেও যেতে পারছি না।
‘সরকার চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত টিকা বিবিআইবিপি-করভি বিশেষ করে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে আসছে। টিকা নেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আবার ক্লাসে ফিরতে পারব।’
সাধারণ মানুষকে কী বার্তা দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে শুরুতে যে ভয় ছিল, সেটা অনেক অংশে কেটে গেছে। মানুষ আগের মতো আর ভয় পায় না।
‘সরকার সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে। আমি সবাইকে বলব, করোনা প্রতিরোধে টিকা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে টিকা নিলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সূত্রে জানা যায়, তারা ২৫৭ জনের তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে প্রথমে সমতার নাম রয়েছে। দ্বিতীয় নম্বরে নাম রয়েছে হোসেন মোহাম্মাদ শাকিলের। এ ছাড়া তৃতীয় নম্বরে তানভীর আহমদ জয়, চতুর্থ নম্বরে মাহাদি হাসান শুভ, পঞ্চম নম্বরে মারজিয়া জেসিকা হোসাইন ও ছয় নম্বরে রয়েছে নাজমুল হকের নাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী সমতাকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। ওই সময় প্রধান অতিথি হিসেবে সশরীরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শুরুর দিন সেখানকার ২৫৭ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে এই টিকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর চারটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে চীনের টিকা। অপর তিন প্রতিষ্ঠান হলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক টিটো মিঞা বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আমাদের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে চীনের টিকা প্রয়োগ শুরু করবেন। প্রথম দিন ২৫৭ শিক্ষার্থীকে এই টিকা দেয়া হবে।’
চীনের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরুর জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চারটি মেডিক্যাল কলেজেই টিকাদান কেন্দ্র, অপেক্ষা ঘর, টিকা দেয়ার বুথ ও বিশ্রাম শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে জরুরি প্রয়োজনে টিকাগ্রহীতা ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, উদ্বোধনের দিন ১ হাজার শিক্ষার্থীকে এই টিকা দেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে এক সপ্তাহ এই কার্যক্রম স্থগিত রাখা হবে। পরে আবার এই টিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণহারে দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচাক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টালের শিক্ষার্থী, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিক্যাল টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। বাংলাদেশে থাকা চীনের কিছু নাগরিককেও এই টিকা দেয়া হবে। সব মিলিয়ে টিকা দেয়া হবে ২ লাখের কম মানুষকে। বাকি টিকা কাদের দেয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
গত ২৯ এপ্রিল জরুরি ব্যবহারে সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ১২ মে বাংলাদেশে এই টিকার ৫ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাঠায় চীন সরকার। আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পাঠানোর কথা দিয়েছে বেইজিং।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের অধীন বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি নামের দুই ডোজের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস জানিয়েছে, তাদের টিকা করোনা প্রতিরোধে ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকর।
চীন, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ফলাফলের ভিত্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, এই টিকা ৮৬ শতাংশ কার্যকর।