করোনার মধ্যে নতুন আতঙ্কের নাম কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাংগাস। করোনায় নাজেহাল ভারতে ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে এই রোগ। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তেলেঙ্গানায় এই ছত্রাকের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে হাজারও মানুষের।
সাধারণত করোনা থেকে সেরে ওঠার সময় কিছু রোগীকে এই ছত্রাকে সংক্রমিত হতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা থেকে একে ছয় রাজ্যে মহামারি হিসেবে ঘষোণা করেছে ভারতের কেন্দ্র সরকার। করোনা রোগীদের মধ্যে এমন সংক্রমণের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়ায় তাদের চিকিৎসায় স্টেরয়েডের ব্যবহারে কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)।
কালো ছত্রাক আগেও ছিল
করোনা থেকে সেরে ওঠার সময় অথবা কিছুদিন পর দেখা দিচ্ছে বিরল ও বিপজ্জনক এ স্বাস্থ্য জটিলতা, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম ‘মিউকরমাইকোসিস’।
দুর্বল শরীরে সাধারণত বাসা বাঁধে এই ছত্রাক
করোনা রোগীরা বেশি দিন আইসিইউতে থাকলে কিংবা তাদের ওপর স্টেরয়েডের ব্যবহার বেশি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর এই সুযোগে শরীরে ঢুকে পড়ছে কালো ছত্রাক।
শুধু যে করোনা রোগীদের মধ্যেই এই ছত্রাক ছড়ায়, তা কিন্তু নয়। কোনো মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
মানুষে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ অনেক আগেই ছিল। তবে করোনায় মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কালো ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ছে। আগে লাখে একজনের শরীরে সংক্রমণ ঘটতো কালো ছত্রাক।
যাদের মধ্যে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে
যাদের শরীর নিজ থেকে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অর্থাৎ ডায়েবেটিস রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। সংক্রমিত হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্তরাও।
মূলত সেসব রোগ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তারাই কালো ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি তারাও এই ছত্রাকে সংক্রমিত হতে পারেন।
শরীরের যেসব অঙ্গে সংক্রমণ ছড়ায়
সাইনাস, মস্তিষ্ক আর ফুসফুসে মূলত কালো ছত্রাক সংক্রমণ ঘটায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যনালী, চামড়া এবং অন্যান্য অঙ্গও সংক্রমিত হতে দেখা গেছে।
সংক্রমণের উপসর্গ
নাকে কালো ছোপ, চোখে ঝাপসা দেখা, নাক বন্ধ, সর্দি এই ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ায় লক্ষণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নাক দিয়ে কালচে কফ বের হয়, নাকের ভেতরের অংশ কালো হয়ে যাওয়া, মুখ ও গালে ব্যথা থাকতে পারে। সংক্রমণ বেশি ছড়ালে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।
কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে
ডায়েবেটিস ছাড়াও যে সকল কোভিড আক্রান্তের ক্যান্সার, কিডনি কিংবা লিভারে জটিলতা আছে, তাদের করোনা থেকে সুস্থ হয়েও সাবধান থাকতে হবে। কারণ ভারতে অনেক রোগীরকে দেখা গেছে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছু দিন পর তারা কালো ছত্রাকের সংক্রমণে পড়েছে।
চিকিৎসা না করালে এই রোগে মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ। চিকিৎসা করালেও খুব একটা ভালো ফল আসে না। চিকিৎসকেরা বলছেন, সময়মত সেবা পেলেও ৫০-৪০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় কালো ছত্রাকে।