রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত রোগী অবাধে ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ঢুকে পড়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন এখন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। ঈদের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বেশ কিছু করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে অনেকাংশে।
ভারতীয় ধরনের অস্তিত্ব নিশ্চিত হতে ৪২ জনের নমুনা ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় বাড়তি তৎপরতা শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
চলতি মাসের শুরুর দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা রোগী তেমন একটা শনাক্ত হয়নি। তবে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কয়েকদিনে আক্রান্তের হার।রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চলতি মাসে ২২ দিনে ২৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মে মাসের প্রথম তিন দিনে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে ৪ মে ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ৬ মে কেউ শনাক্ত না হলেও ৭ মে ১৫ জনের করোনা ধরা পড়ে। ৮ মে এক জন, ৯ মে পাঁচ জন, ১০ মে এক জন, ১১ মে ১০ জন, ১২ মে ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৩ মে কেউ আক্রান্ত হননি। ১৪ মে ১১ জন, ১৫ মে দুই জন, ১৬ মে ১৬ জন, ১৭ মে ১০ জন, ১৯ মে ২৯ জন, ২০ মে ছয় জনের করোনা শনাক্ত হয়। ২১ মে ৭৩ জনের করোনা ধরা পড়ে। ২২ মে আক্রান্ত হন চার জন।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে যেসব করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের অর্ধেকই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা। আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের একটি বড় অংশই সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তাদের কেউ কেউ সম্প্রতি ভারত থেকে এসেছেন কিনা বা করোনার ভারতীয় ধরন বহন করছেন কিনা, তা নির্ণয়ের জন্য কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে।
সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে সম্প্রতি ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত আনা শুরু হয়। এদের মধ্যে একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ২১ মে হাসপাতালে ১৩৬ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৬ জনের বাড়িই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আইসিইউতে ভর্তি ১২ রোগীর মধ্যে আট জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলা থেকেই বেশি রোগী আসছে। সীমান্ত এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি। এ কারণে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ভারতীয় ধরন ঢুকে পড়ল কিনা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।’রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা রোগীর চাপ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এসব রোগীর নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুরোপুরি লকডাউনের প্রস্তাব দিয়েছি। সীমান্তে কঠোর কড়াকড়িরও দরকার।’
হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ায় কারণ সম্পর্কে জেলার সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, ঈদে ঢাকা থেকে আসা মানুষই ছড়িয়েছে করোনা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে অনিহার কারণে এমনটা হয়েছে।তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জে রোগী বেশি বলা হলেও আসলে সদর উপজেলায় রোগী বেশি, এরপর শিবগঞ্জে। সদর উপজেলায় ৮৪ জন, শিবগঞ্জে ৫০ জন, নাচোলে ৪১, গোমস্তাপুরে ২০ ও ভোলাহাটে ৩ জন। বর্তমানে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯৮ জন।
সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি। আর ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের সীমান্ত বন্ধই ছিল। গত তিন দিনে ভারত থেকে ৩৭ বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এন্টিজেন টেস্ট করার পর তাদের করোনা নেগেটিভ এসেছে।তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতফেরতসহ ৪২ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠিয়েছি। রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। মূলত রোগী বেড়েছে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য, সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে আসার খুব বেশি সুযোগ নেই।’চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আমীর হোসেন মোল্লা বলেন, ‘চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজে এ দেশের মানুষের সীমান্তবর্তী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বা আত্মীয়তা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি, তারা যেন বাংলাদেশে না আসে। আমরা সাধারণত চোরাচালান রোধেই চেষ্টা করি। এখন করোনার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সীমান্তের অধিবাসীদের করোনা ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ চলছে বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তা আমীর হোসেন। রাজশাহীতে বিজিবি-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাব্বির আহমেদ জানান, সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। যেসব এলাকায় কাঁটাতার নেই সেখান দিয়ে কেউ যেন সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে সেটি কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।