খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত ৬৬ চীনা শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, আইসোলেশনে রাখা হলেও তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকায়, বাজারে গিয়ে কেনাকাটাও করছেন।
খালিশপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল প্রথম ১০ জন চীনা শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৮ জনের পজিটিভ আসে। এর পর অন্য চীনা শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের করোনা ল্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণাধীন ৩৩০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টে কর্মরত ৪২ চীনা শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হয়। কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। অন্য পাঁচজনকে খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরেই আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
পাওয়ার প্ল্যান্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গত এক মাসে (১৮ এপ্রিল থেকে ১৮ মে) প্রজেক্টের চীনা শ্রমিকদের মধ্যে ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১৯ জন এখন করোনামুক্ত। এখনও ৬৬ জন আক্রান্ত আছেন। আক্রান্তরা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।’
তারা কোয়ারেন্টিন মানছেন না- স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা বিদেশি নাগরিক, এমনিতেই স্থানীয়দের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করেন না... আক্রান্ত কেউ কাজে অংশ নেননি। আক্রান্তদের সবাই করোনা টিকা নিয়েছেন।’
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘এতো সংখ্যক চীনা শ্রমিক কেন করোনায় আক্রান্ত হলেন, তা দেখার জন্য আইইডিসিআরের (রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর তদন্তের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’
আইইডিসিআর খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর হাসনাইন শেখ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার প্রজেক্টে পরিদর্শনে গেলেও সেখানকার চীনা কমিউনিটিতে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। যা কথা বলার তা ফোনেই বলতে হয়েছে। তাদের সকলের করোনার টিকা দেয়া আছে। তাদের নিজস্ব চিকিৎসকও রয়েছেন। তবে আক্রান্ত চীনা নাগরিকরা কাজে অংশ নিচ্ছেন কি না, বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। ওই চীনা নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সকলের করোনা নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই বাইরে বের হতে পারবেন না।’
পাওয়ার প্লান্ট সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে ১৮৫ জন চীনা শ্রমিক কাজ করেন। ২০১৮ সালে এই প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পে বাঙালি শ্রমিকের সংখ্যা ৫০০-৬০০ জন। এ ছাড়া, প্রতিদিন প্রায় ২০০ শ্রমিক এই প্রজেক্টে অস্থায়ীভাবে কাজ করেন।