চুক্তি অনুযায়ী আগামী মাসের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী তিন কোটি টিকা দেশে আসার কথা থাকলেও মাত্র ৭০ লাখ ডোজ দিয়েই টিকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এমনকি এ বছরের শেষে ছাড়া অন্য দেশকে টিকা দিতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা সম্পন্ন নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। এদের দ্বিতীয় ডোজ শেষ করতে বিকল্প উৎস থেকে টিকা খোঁজা হচ্ছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে এখনও কোনো দেশ থেকে উত্তর পাওয়া যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে অন্য কোম্পানির টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায় কি না এমন ভাবনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এরই মধ্যে দুই কোম্পানির দুই ডোজ মিলে করোনাভাইরাসের মিক্সড ডোজ টিকা দেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পরামর্শ চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র রোবেদ আমীন বলেন, ‘স্পেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ডোজ অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং দ্বিতীয় ডোজ মডার্না কিংবা ফাইজারের মতো এমআরএনএ টিকা দেয়ার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি ৩০-৪০ গুণ বেড়েছে, যা করোনা প্রতিরোধে সহায়ক। আবার যারা প্রথম ডোজ এমআরএনএ টিকা এবং দ্বিতীয় ডোজ অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নিয়েছেন, তাদেরও অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রমাণ তারা পেয়েছেন।’
রোবেদ আমীন আরও বলেন, ‘আমাদের ভাবার সময় এসেছে, যখন একই টিকা অনেক পরিমাণে রাখতে পারছি না, সেক্ষেত্রে এই মিক্সড ডোজ ভ্যাকসিন চালু করা যাবে কিনা। এ বিষয়ে টিকা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।’পরামর্শক কমিটি এক সদস্য ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, অন্য কোম্পানির টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যাবে। তবে এখনও অধিদপ্তরকে কোনো ধরনের সুপারিশ করে নি করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তারা বলছেন, এ বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যে বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোম্পানির টিকা দেয়া যাবে কি না, এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোম্পানির টিকা দেয়ার আগে দেশে কোনো গবেষণা করা গেলে ভালো হতো।’
তবে প্রথম ডোজ অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানি টিকা দিলে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, তবে এই সিদ্ধান্ত নেবে কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, অন্য কোম্পনির টিকায় দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হতে হবে রেগুলেটরি অথোরিটি দিয়ে। যেমন এটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) অথবা এটি হতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অথবা টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে বলতে হবে। টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বলবে, তাদের প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির টিকা দেয়া যাবে কিনা।
তিনি বলেন, তবে বাংলাদেশ তা মানবে কি না, সে সিদ্ধান্ত দেবে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তারা বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত জানাবে। তা না হওয়া পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ দিয়ে অন্য কোম্পানির টিকা দেয়া ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে মিক্সড ডোজ টিকা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। আমাদেরও এমন গবেষণা হওয়া উচিত। আমাদের দেশে এই ধরনের গবেষণার সুযোগ রয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে দেওয়া হয়েছে ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৮ ডোজ। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩৬ ও প্রথম ডোজ ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২। অর্থাৎ সরকারের কাছে বুধবার পর্যন্ত মজুদ ছিল ৬ লাখের কিছু বেশি টিকা। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রথম ডোজ নিয়েছেন এমন ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ জন এ দফায় করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দুই মাস ও তিন মাস এমনকি চার মাস পরে দেয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে যদি টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব না হয় তাহলে জটিল পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।