দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার যে পরিমাণ মজুত আছে তা আর বড়জোর এক সপ্তাহ চলতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলা হয়েছে, মজুত শেষ হওয়া মাত্রই স্থগিত করা হবে টিকা প্রয়োগ।
করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রোববার স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘কোনো হাসপাতালে যদি আজ টিকার মজুত শেষ হয়ে যায়, তাহলে আপাতত সেই হাসপাতালের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া বন্ধ থাকবে। আর আগামীকাল থেকে ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হবে না। যেসব হাসাপাতালে টিকার মজুত আর দুদিন আছে, সেই হাসপাতাল দুইদিন টিকা দিতে পারবে।
‘আমাদের হাতে যা টিকা আছে এটা দিয়ে হয়তো আরও এক সপ্তাহ চলবে। টিকার মজুত শেষ হলে এই টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সিরাম থেকে নতুন করে টিকা না পাই।’
বাংলাদেশ করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমের শুরু থেকেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভর করে আসছিল। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে গত বছরের ৫ নভেম্বর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে ঢাকা। চুক্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় ধাপে দেশে ৩ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছানোর কথা থাকলেও সিরাম তা পারছে না। দুই ধাপে ৭০ লাখ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।
সিরাম থেকে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি আসে গত জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। তবে কেনা টিকার বাইরে ভারত সরকার তিন ধাপে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে দেশে টিকার মজুত দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ।
এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা মজুত নিয়ে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় করোনা প্রতিরোধী গণটিকা কার্যক্রম।
গণটিকাদান শুরুর ৭৮ দিনের মাথায় ২৫ এপ্রিল প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তত দিনে প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয় ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৬ জনকে। এদের সবার দ্বিতীয় ডোজ লাগবেই। প্রথম ডোজে যাদের সিরামের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবার টিকা নিশ্চিত করতে হলে আরও অন্তত ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৯২ ডোজ লাগবে। সরকারের মজুতে সে পরিমাণ টিকা নেই।
তবে টিকার সংস্থানের জন্য সরকার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘টিকা সংগ্রহে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যে সুফল পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার টিকা পেতে সেই দেশের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে, বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। চীন থেকে টিকা আনার বিষয়ে আমরা আলাপ আলোচনা করছি। আশা করছি, এই মাসের শেষের দিকে অথবা সামনের মাসের প্রথম দিকে এ বিষয়ে আপনাদের আরও বিস্তারিত বলতে পারব।’