বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণপরিবহন চালুতেই সমাধান দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

  •    
  • ১৫ মে, ২০২১ ১৫:৫১

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যেভাবে বাড়ি ফিরেছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। এভাবে একটি খাত বন্ধ রেখে ভোগান্তি না বাড়িয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনসহ সব পরিবহন খুলে দেয়া হোক।

ঈদের ছুটি শেষ হবে শনিবার। আগামীকাল থেকেই ঢাকায় আসতে হবে ঈদের আগে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া লোকজনকে। তবে যেভাবে ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামে ফিরেছে একইভাবে ঢাকায় আসার বিপক্ষে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করাই হবে ভালো সমাধান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকার ৪ এপ্রিল কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। ১৮টি বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন ও শপিং মল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।

তবে পরবর্তী সময়ে বিধিনিষেধ বাড়লেও খুলে দেয়া হয় শপিং মল। এরপর আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

গত দুই সপ্তাহে শপিং মলগুলোতে ঈদ কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। এরপর গত সপ্তাহে খুলে দেয়া হয় নগর পরিবহন। তবে চালু করা হয়নি আন্তজেলা বাস। আর এতে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি চরম মাত্রায় বাড়তে থাকে।

ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষ নানা উপায়ে ভিড় করে ফেরি ঘাটে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ নিয়ে পার হয় ফেরি। সংক্রমণ বাড়ার কথা বলে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সেটি উপহাসে পরিণত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যেভাবে বাড়ি ফিরেছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। এভাবে একটি খাত বন্ধ রেখে ভোগান্তি না বাড়িয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনসহ সব পরিবহন খুলে দেয়া হোক।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এভাবে যারা ঢাকা ছেড়েছে সেখানে বরং স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ নেই।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব খুলে দিতে হবে। সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে এখন। শুধু সড়ক পরিবহন নয়, নৌপরিবহনও খুলে দিতে হবে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ঈদের আগে যেমন দুই-তিন দিনের মধ্যে মানুষ বাড়িতে ফিরে গেছে আসার ক্ষেত্রে একটু সময় নিতে পারে। যেভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে, সেটা একটু মনিটরিং করলে আর কোনো সমস্যা হবে না।’

দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যে অবস্থা তাতে তো আপনি সবকিছু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকতে পারেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব খুলে দেয়া যেতে পারে। আর আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে পারি।’

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবশ্যই গণপরিবহন খুলে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেখুন ঈদের আগে মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহর থেকে বাড়ি যাবে। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এবং জনমনস্তত্ত্বের সাথে জড়িত। এটিকে মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুইটি উপায় নেয়া উচিত ছিল। এক. আপনি সব কিছু বন্ধ রাখুন। সে ক্ষেত্রে বাইসাইকেল থেকে শুরু করে অ্যারোপ্লেন বন্ধ থাকবে। কেউ কোথাও যেতে পারবে না। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলবে। দুই. আপনি সব খোলা রাখেন, যাতে সবাই যাতায়াত করতে পারে।’

‘কিন্তু সরকার এটি না করে কী করল? যাদের প্রাইভেট কার আছে বা বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি নিতে পারবে আবার যাদের বিমানের টিকিটের টাকা আছে, তারা বাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষ কিন্তু সেটি পারছে না। তাই তারা বাড়ি যাচ্ছে। ১৬ তারিখে অফিস খুলবে। আমরা যাই নির্দেশ দিই আর না দিই তারা তো চাকরি বাঁচাতে ফিরে আসবে।’

সংকট নিরসনে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন লেলিন।

তিনি বলেন, ‘সরকার ছুটি আরও তিন দিন বাড়িয়ে দিক। আর এটি সব সরকারি ও বেসরকারি কর্মস্থলে প্রযোজ্য থাকবে। না হয় বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক গণপরিবহন খুলে দিক। এতে চাপ কমতে পারে।

‘নির্দিষ্ট বিভাগ অনুযায়ী মানুষ গণপরিবহনে ফিরে আসুক। তবে অবশ্যই সেটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অথবা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে দেয়া হোক। অবশ্যই সেটি দুই সিটে একজন করে বসবে।’

সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঈদের পর আরও অন্তত এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর ২০ থেকে ২২ তারিখের দিকে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। এ দিক থেকে আমাদের পরিকল্পনা আছে ঈদের পরে আরও এক সপ্তাহ বিধিনিষেধ চলমান রাখা অন্তত।’

আন্তজেলা পরিবহন খুলে দেয়া নিয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

তিনি বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, সেটা আমরা চিন্তা করছি। ২০-২২ তারিখে কী অবস্থা হয়, সেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যা আছে সেভাবেই। নতুন কিছু থাকলে সেটা জানানো হবে। কী হবে সেটা সবটা ১৬ তারিখে জানানো হবে।’

পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেভাবে মানুষ বাড়িতে গিয়েছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ ছিল না। যদি গণপরিবহন খুলে দেয়া হয় আর সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয় তবে কিন্তু এই সমস্যা থাকত না।’

সরকার কী কারণে পরিবহন বন্ধ রাখতে বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার সংক্রমণের ভয় পাচ্ছে। তবে যেভাবে এখন সবকিছু চলছে তাতেই তো সংক্রমণ বাড়ার কথা।

‘আমরা তো দেখেছি ফেরিতে মানুষ কীভাবে পার হয়েছে। সেখানে গণপরিবহন থাকলে সুষ্ঠুভাবে যাওয়া যেত।’

এ বিভাগের আরো খবর