দেশে করোনাভাইরাসের ডাবল মিউট্যান্টের ভারতীয় ধরন শনাক্ত হলেও এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম।
তিনি জানান, আইইডিসিআর যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের খবর দিয়েছে। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নাই। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি সতর্কতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
‘এটার প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগ আছে। দেশবাসী ভয় না পেয়ে এ পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারলে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের যে স্থিতি অবস্থা রয়েছে তা ধরে রাখা সম্ভব হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মুখপাত্র জানান, নতুন ধরনটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ভারত থেকে যেসব লোক দেশে প্রবেশ করছে তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিইনে রাখা হচ্ছে।
নাজমুল ইসলামের দাবি, ভ্যারিয়েন্ট যেকোনো ধরনের হোক না কেন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা কাছাকাছি।
করোনা বিস্তার রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে ভারতের ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, হয়তো নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট আসবে। রোগীর সংখ্যা কিন্তু কমবে না। জনবল এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিন্তু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারি।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ভারতের ভ্যারিয়েন্ট আরও বেশি সংক্রামক। একজন রোগী এক মাসে ৪০৬ জনকে আক্রান্ত করতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
প্রতিবেশী দেশের গবেষণা সংস্থাটির দেয়া তথ্য উদ্বেগজনক ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। এই ভ্যারিয়েন্ট রোধে সীমান্ত বন্ধের পরও সংক্রমণ ঘটেছে, এরই মধ্যে দেশে ছয় জনের শরীরে ভারত ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত মানুষের অসচেতনতায়। বারবার সাবধান করা হলেও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি পাত্তা পাচ্ছে না। ঈদ কেনাকাটা আর বাড়ি ফিরতে মানুষ যে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছে, সেটি করোনার সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত ভ্যারিয়েন্টের বিষয়টি তুলে ধরে রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আবার নতুন একটা ভাইরাস এসেছে। এটা আরও বেশি ক্ষতিকারক, যাকে ধরে সাথে সাথে মৃত্যু হয়। এ জন্য আপনি নিজে সুরক্ষিত থাকেন, অপরকে সুরক্ষা দেন।’
দেশে অক্সিজেনের সংকট নেই
প্রতিবেশী ভারতে অক্সিজেনের মারাত্মক সংকট তৈরি হলেও বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। দেশে উৎপাদিত অক্সিজেন দিয়েই চাহিদা মেটানো যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে অক্সিজেনের সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশে এখনও অক্সিজেনের সংকট তৈরি হয়নি।
‘বাংলাদেশে যেসব কোম্পানি অক্সিজেন উৎপাদন করছে সেই অক্সিজেন দিয়েই আমাদের হাসপাতালে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। যেহেতু রোগীর সংখ্যা কম। আপাতত অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। আগামী দিনেও এই সংকট থাকবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যে পরিমাণ অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুণ অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে দেশে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে অক্সিজেন জেনারেটর আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাইফ্লো ন্যাজেল ক্যানুলা ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পর্যাপ্ত সংখ্যক সরবরাহ করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা এখন ২০ হাজারের বেশি রয়েছে। করোনা নমুনা শনাক্তে ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪৩টি করা হয়েছে।’