বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন ভ্যারিয়েন্ট, টিকার ঘাটতিতে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা

  •    
  • ৯ মে, ২০২১ ১৫:১৪

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে মহামারির ঊর্ধ্বগতির বিপজ্জনক প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও। বিশেষ করে যখন টিকা কর্মসূচি জোরেশোরে এগোনোর কথা, তখনই টিকার সংকট তৈরি হয়েছে বলে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তার ওপর ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিক সংক্রামক করোনার বিস্তারও বাড়ছে।

করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন আর টিকার ঘাটতিতে মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারত। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেও।

শনিবার বাংলাদেশে প্রথম ভারতীয় ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে রয়েছে টিকার ঘাটতিও।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে মহামারির ঊর্ধ্বগতির বিপজ্জনক প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও। বিশেষ করে যখন টিকা কর্মসূচি জোরেশোরে এগোনোর কথা, তখনই টিকার সংকট তৈরি হয়েছে বলে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তার ওপর ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিক সংক্রামক করোনার বিস্তারও বাড়ছে।

ভারতে প্রথম শনাক্ত যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার উপস্থিতি বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি এখনও।

এর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে করোনার যত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং হয়েছে, তার অধিকাংশই ছিল সাউথ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট।

অব্যাহত রূপ পরিবর্তনের ফলে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো বেশি সংক্রামক। এগুলোর ওপর করোনা প্রতিরোধী বিদ্যমান টিকার কার্যকারিতা কম বলে আগেই সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, মার্চ ও এপ্রিলের শুরুর দিকের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার কমেছে। কিন্তু এর কারণ অস্পষ্ট। এখনই মোক্ষম সময় করোনা প্রতিরোধে টিকা কর্মসূচির গতি বাড়ানোর।

দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করছেন শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।

তিনি বলেন, ‘টিকাদানের গতি বাড়িয়ে করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখার এখনই সময়। এখনই নিশ্চিত করা দরকার যে ভাইরাসের নতুন রূপগুলোর বিস্তার এ দেশে যেন না বাড়ে।’

বাংলাদেশে টিকা আসার মূল উৎস ভারত। করোনা মহামারির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডোজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে দিল্লি।

বিশ্বে টিকা উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ করোনা প্রতিরোধী টিকা। এখন পর্যন্ত এ টিকাই সবচেয়ে বেশি কিনেছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসাবে জুনের মধ্যে বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ পাঠানোর কথা ছিল সিরামের। সেখানে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষক ড. আ স ম আলমগীর জানান, মহামারির এ পর্যায়ে টিকার ঘাটতি উদ্বেগজনক।

টিকার ঘাটতি দেখা দেয় গত মাসে প্রথম ডোজ নেয়ার জন্য নিবন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করেছে সরকার। বিঘ্নিত হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও।

এ অবস্থায় মরিয়া হয়ে টিকা আমদানির জন্য ভারতের বিকল্প উৎসের সন্ধান করছে বাংলাদেশ।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশে রাশিয়া ও চীন উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশ দুটি থেকে টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তিও দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

চীন থেকে ১২ মে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে বাংলাদেশে।

টিকার ঘাটতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও দুই কোটি ডোজ চেয়েছে সরকার।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের অব্যাহত রূপ পরিবর্তন ও দেশে নতুন নতুন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার উপস্থিতি এমনিতেই উদ্বেগের কারণ। টিকার সংকটে এ জটিলতা আরও বাড়বে।’

বিশ্বে করোনার দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে ভারত। প্রতিদিন গড়ে শনাক্তের সংখ্যা বেশ কিছুদিন ধরেই চার লাখের উপরে রয়েছে। দৈনিক প্রাণহানির রেকর্ডও চার হাজার ছাড়িয়েছে।

অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় করোনায় ১৬৬ জন প্রাণ হারাচ্ছে দেশটিতে। প্রতি মিনিটে এ সংখ্যা কমপক্ষে তিন।

ছোঁয়াচে ভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হয়ে ভ্রমণ বন্ধ থাকলেও অব্যাহত আছে পণ্য আনা-নেয়া।

যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় সব দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রয়োজনের তুলনায় ভীষণ অপ্রতুল। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ধারেকাছেও নেই। অর্থাৎ নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এ দেশে কতটা, সে বিষয়ে একেবারেই অনিশ্চিত গবেষকরা।

এ নিয়ে ড. আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে মহামারির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। বিশেষ করে আমাদের সীমান্ত যখন পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়, তখন তো এ শঙ্কা অনিবার্য।’

গত বছরের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে প্রায় পৌনে আট লাখ মানুষের দেহে। প্রাণহানি ১২ হাজারের কাছাকাছি।

ড. আলমগীর বলেন, ‘দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে ব্যর্থতার অর্থ হলো প্রাকৃতিক নিয়মে ভাইরাসটিকে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়া, যা এড়ানোর কোনো উপায় নেই।’

ঠিক এ ধরনের পদক্ষেপের ফলেই ভারতে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা এতোটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ল্যানসেটের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির প্রথম ধাক্কা নিয়ন্ত্রণের সাফল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের অতি আত্মতুষ্টিই ভারতে জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভাইরাসের বিস্তার সীমিত থাকাকালীন একের পর এক ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। বিশেষ করে সংকট সামলাতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা ও উন্মুক্ত আলোচনা দমনেরও তীব্র সমালোচনা করা হয় এতে।

হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে ধর্মীয় কুম্ভমেলায় কোটি মানুষের সমাগম আর পাঁচ রাজ্যে মাসব্যাপী বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ও প্রচারণার পরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র রূপ নেয় দেশটিতে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিদদের বারবার সতর্কতাও নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন আমলে নেয়নি বলে রয়েছে অভিযোগ।

অন্যদিকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এক বছরের মধ্যে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু রেকর্ড করে বাংলাদেশ।

এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে প্রাণহানি ও সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করলে গৃহীত স্বাস্থ্যবিধি একে একে শিথিল করে সরকার।

দেশজুড়ে লকডাউন কমপক্ষে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলেও সচল রয়েছে শপিং মল, স্থানীয় পরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নিজস্ব ব্যবস্থায় ঢাকা ছাড়ার অপেক্ষায় আছে লাখো মানুষ।

অথচ ভারতের সীমান্তবর্তী আরেক দেশ নেপালেও করোনার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে দেশটি।

এমন পরিস্থিতি স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা আর লকডাউনের শৈথিল্যের ফলে ভারতের পরে মহামারির ঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।

এ বিভাগের আরো খবর