যশোরে করোনা আক্রান্ত যে দুই জনের মধ্যে ভারতীয় মিউটেন্ট শনাক্ত হয়েছে, তাদের কেউ ভারত থেকে আসেননি।
এদের একজনের বাড়ি খুলনায় এবং একজনের সাতক্ষীরায়। এদের একজন নারী এবং একজন পুরুষ।
এই দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানিয়েছেন জিনম সিকোয়েন্সিং কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ।
গবেষণাটি হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনম সেন্টারে।
এদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় গত ৬ মে। আর দুই দিন পর শনিবার বিকেলে রিপোর্ট আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেই দুই রোগীর বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়।
জিনম সেন্টারটির সহযোগী পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ইকবাল কবির জাহিদ নিউজবাংলাকে জানান, বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেই দুই রোগীকে আলাদা করে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লুকোচুরি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাংবাদিকদেরকে ডেকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি প্রচার করেছে, অথচ যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার কিছুই স্বীকার করছেন না। তার দাবি, এই ধরনের কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, ‘গ্লোবাল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে ছয়টি ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। চারটি কাছাকাছি মিল রয়েছে, আর দুটি নিশ্চিত পাওয়া গেছে।’
এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনার চারটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেলে। এর আগ পর্যন্ত করোনার ইতালি, ইউকে, সাউথ আফ্রিকান ও নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে।
তবে সম্প্রতি ভারত পরিস্থিতি ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে বাংলাদেশে। সেখানে করোনার যে ভ্যরিয়েন্ট মানুষকে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটির বাংলাদেশে আসা ঠেকাতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সীমান্ত।
তবে ভারত থেকে আসেননি, এমন দুই জনের মধ্যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে ভাইরাসটি এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
সীমান্ত বন্ধ করে দিলেও ভারত থেকে মানুষের আসা একেবারে বন্ধ নয়। বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে আসা যাচ্ছে বেশ কিছু স্থল সীমানা দিয়ে। তবে সীমান্তেই হচ্ছে করোনা পরীক্ষা আর ১৪ দিনের জন্য থাকতে হচ্ছে কোয়ারেন্টিনে।
যদিও সম্প্রতি ভারত থেকে আসা সাত জন করোনা রোগী যশোর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়ে বাড়ি চলে যান। এদের কয়েকজনের বাড়ি যশোরে, কয়েকজনের সাতক্ষীরায়, কয়েকজনের খুলনায়, রাজবাড়ীরও আছেন একজন।
সেই সাত জনের কাছ থেকেও নমুনা সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে তাদের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনও জানানো হয়নি।
আর যে দুই জনের মধ্যে ভারত ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যও জানাচ্ছে না কোনো পক্ষ।
যশোরের স্বাস্থ্য প্রশাসন তো বিষয়টি স্বীকারই করছে না।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতফেরত করোনার রোগীর নমুনায় ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ল্যাবে কিছু সিকোয়েন্স করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি আমরা আইইডিসিআরকে (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) জানিয়েছি। পাশাপাশি যশোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করেছি।’
ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে তিনজন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টের (বি-১.৬১৭.২) অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
তবে এটি ডাবল মিউটেশন নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটি এসেছে, ফলে ডাবল মিউটেশন বা অন্য ভেরিয়েন্টও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
করোনার ভারত ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে যাদের শরীরে, তারা যশোর হাসপাতালে ভর্তি
তবে বিষয়টি স্বীকার করছেন না যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনা রোগী সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার কাছে নেই। ভারত থেকে আসা করোনাক্রান্তরা করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।’
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীনও কোনো তথ্য দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমাকে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। ভারত ফেরত যে ৬০ জনের করোনা শানাক্ত হয়েছে তারা সবাই যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আছেন।’