করোনাভাইরাস মহামারির তৃতীয় ধাক্কা এড়াতে পারবে না ভারত। সেকেন্ড ওয়েভে বিপর্যস্ত দেশটিতে সরকারের বিজ্ঞানবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ড. কে বিজয়রাঘবন দিয়েছেন এ হুঁশিয়ারি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাসটির অব্যাহত রূপ পরিবর্তনের কারণে দ্রুততম সময়ে করোনার টিকার আধুনিকায়নের বিকল্প নেই বলে মত ড. বিজয়রাঘবনের।
মঙ্গলবারও দেশটিতে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। টানা ১৪তম দিনের মতো দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারতে এ পর্যন্ত ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ মানুষের দেহে।
অন্যদিকে এদিন ভারতে করোনায় রেকর্ড ৩ হাজার ৭৮৬ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরের অবস্থান ভারতের। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে। কেবল গত দুই সপ্তাহেই মারা গেছেন সাড়ে ৪৩ হাজার মানুষ।
এ অবস্থায় বুধবার সরকারিভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. বিজয়রাঘবন বলেন, ‘যে হারে ভাইরাসের বিস্তার বাড়ছে, তাতে থার্ড ওয়েভ অবধারিত। কিন্তু মহামারির তৃতীয় ধাক্কাটি ঠিক কখন আঘাত করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আশা করছি যে থার্ড ওয়েভের আগেই যথাযথ প্রস্তুতি আমরা নিতে পারব। এজন্য টিকার আধুনিকায়নের কাজও চলছে।’
বৈশ্বিক মহামারির এ পর্যায়ে দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারত সরকার। গত এক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে যত মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তার অর্ধেকই ভারতে- জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটির মহামারিবিষয়ক সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক সপ্তাহে বিশ্বে করোনায় প্রাণহানির প্রায় ২৫ শতাংশ ঘটেছে ভারতে।
ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে করোনার টেস্ট কিট, ওষুধ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক লোকবল সংকট।
হাসপাতালে বেডের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি পার্কিং এলাকায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক মানুষ। মহামারির সেকেন্ড ওয়েভের দাপটে মৃত্যুর মিছিল কল্পনাতীতভাবে বাড়তে থাকায় মরদেহের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন শ্মশান ও কবরস্থানের কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্যবিদরা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কার পূর্বাভাস দেয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপেক্ষা করার অভিযোগে সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাসব্যাপী ভোট গ্রহণ ও তার আগের দীর্ঘ প্রচারণা এবং কুম্ভমেলায় কোটি মানুষের সমাগমের ফলে ভারতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে করোনার বিস্তার বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার একটি কলামে প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক অরুন্ধতি রায় লিখেছেন, ‘আমাদের একটি সরকার দরকার। ভীষণভাবে দরকার। আমাদের সরকার নেই। আমাদের শ্বাস নেয়ার বাতাসটুকুও শেষের দিকে। আমরা মরছি…’
মোদিকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, ‘এই সংকট আপনার তৈরি করা। আপনার ক্ষমতা নেই সমাধানের। আপনি খালি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারবেন।… আপনি দয়া করে চলে যান। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি দায়িত্ববোধ দেখাতে আপনি পারবেন না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নৈতিক অধিকার আপনি হারিয়েছেন।’
স্বাস্থ্যবিদদের শঙ্কা, ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়েও পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি। গত চার মাসেই দেশটিতে ১ কোটির বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অথচ মহামারি শুরুর প্রথম ১০ মাসেও এ সংখ্যা এত বেশি ছিল না।
প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৫ লাখে নেমে এসেছে বলে বুধবার জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। গত শনিবারও রেকর্ড প্রায় ২০ লাখ নমুনা পরীক্ষা হয় ভারতে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খুব শিগগিরই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারবে না ভারত। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও প্রাণহানির সংখ্যা আগামী ছয় থেকে ৯ মাসের মধ্যে সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে।
যখন কোনো জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের দেহে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে বা প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তখন গোষ্ঠীটি হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে বলে মনে করা হয়। হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের ফলে ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণের হার শূন্যের কাছাকাছি থাকে।