বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্বে অর্ধেক করোনা রোগী এখন ভারতের: প্রতিবেদন

  •    
  • ৫ মে, ২০২১ ১৬:৫৪

স্বাস্থ্যবিদদের শঙ্কা, ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়েও পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি। গত চার মাসেই দেশটিতে ১ কোটির বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অথচ মহামারি শুরুর প্রথম ১০ মাসেও এ সংখ্যা এত বেশি ছিল না। প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৫ লাখে নেমে এসেছে বলে বুধবার জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।

গত এক সপ্তাহে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি চারজনের একজনের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। এক সপ্তাহে নতুন সংক্রমণ শনাক্তেরও অর্ধেক এই একটি দেশে।

বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর আগেই মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় রেকর্ড ৩ হাজার ৭৮৬ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ডব্লিউএইচওর সাপ্তাহিক মহামারিবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক সপ্তাহে সারা বিশ্বে যত মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তাদের ৪৬ শতাংশই ভারতের।

মঙ্গলবারও দেশটিতে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে টানা ১৪তম দিনের মতো দেশটিতে ৩ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক সপ্তাহে সারা বিশ্বে করোনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, তার ২৫ শতাংশই ভারতে।

গত দুই সপ্তাহে ভারতে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে অর্ধ কোটির বেশি মানুষের দেহে। মারা গেছেন সাড়ে ৪৩ হাজার মানুষ। শুধু মঙ্গলবারই ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে রেকর্ড ৩ হাজার ৭৮৬ জনের।

করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরের অবস্থান ভারতের। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার।

সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত। দেশটিতে এ নিয়ে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ মানুষের দেহে।

চতুর্দিকে হাহাকার

ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে করোনার টেস্ট কিট, ওষুধ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক লোকবল সংকট।

হাসপাতালে বেডের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি পার্কিং এলাকায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক মানুষ। মহামারির সেকেন্ড ওয়েভের দাপটে মৃত্যুর মিছিল কল্পনাতীতভাবে বাড়তে থাকায় মরদেহের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন শ্মশান ও কবরস্থানের কর্তৃপক্ষ।

করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে অনেক হাসপাতাল।

অক্সিজেন সংকট নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতালের পিটিশনের শুনানি করছেন দিল্লি উচ্চ আদালতের দুই বিচারকের একটি বেঞ্চ। ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত এসব শুনানিতে বারবারই ভারত সরকারকে নাগরিকদের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিতের সাংবিধানিক দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপর্যাপ্ত জোগান ও সরবরাহে নানা রকম বিঘ্ন ঘটায় ভারতে টিকাদান কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টিকা না থাকায় মহারাষ্ট্রসহ তিনটি রাজ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কেন্দ্র।

লকডাউনের বিকল্প দেখছেন না স্বাস্থ্যবিদরা

এ অবস্থায় মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউনের আহ্বান জানাচ্ছে ভারতের বিরোধী দলগুলো। কিন্তু গত বছরের মতো আবারও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শঙ্কায় এমন পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নয় নরেন্দ্র মোদির সরকার। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি রাজ্যে কঠোর করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি, চলছে লকডাউন-কারফিউ।

মিয়ানমার সীমান্তের প্রত্যন্ত মিজোরাম রাজ্যে জোরাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে শুধু করোনার রোগীদের। রাজ্যটিতে সবচেয়ে বড় এই কোভিড হাসপাতাল থেকে অন্য রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে রয়টার্সকে জানান ড. জেড আর থিয়ামসাঙ্গা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের মাত্র ১৪টি ভেন্টিলেটরের তিনটি এখন ফাঁকা। আমি মনে করি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই।’

কমেছে নমুনা পরীক্ষা

স্বাস্থ্যবিদদের শঙ্কা, ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়েও পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি। গত চার মাসেই দেশটিতে ১ কোটির বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অথচ মহামারি শুরুর প্রথম ১০ মাসেও এ সংখ্যা এত বেশি ছিল না।

প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৫ লাখে নেমে এসেছে বলে বুধবার জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। গত শনিবারও রেকর্ড প্রায় ২০ লাখ নমুনা পরীক্ষা হয় ভারতে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খুব শিগগিরই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারবে না ভারত। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও প্রাণহানির সংখ্যা আগামী ছয় থেকে ৯ মাসের মধ্যে সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে।

যখন কোনো জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের দেহে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে বা প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তখন গোষ্ঠীটি হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে বলে মনে করা হয়। হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের ফলে ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণের হার শূন্যের কাছাকাছি থাকে।

চাপে নরেন্দ্র মোদি

স্বাস্থ্যবিদরা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কার পূর্বাভাস দেয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপেক্ষা করার অভিযোগে সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাসব্যাপী ভোটগ্রহণ ও তার আগের দীর্ঘ প্রচারণা এবং কুম্ভমেলায় কোটি মানুষের সমাগমের ফলে ভারতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে করোনার বিস্তার বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার একটি কলামে প্রখ্যাত ভারতীয় লেখক অরুন্ধতি রায় লিখেছেন, ‘আমাদের একটি সরকার দরকার। ভীষণভাবে দরকার। আমাদের সরকার নেই। আমাদের শ্বাস নেয়ার বাতাসটুকুও শেষের দিকে। আমরা মরছি…’

মোদিকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, ‘এই সংকট আপনার তৈরি করা। আপনার ক্ষমতা নেই সমাধানের। আপনি খালি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারবেন।… আপনি দয়া করে চলে যান। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি দায়িত্ববোধ দেখাতে আপনি পারবেন না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নৈতিক অধিকার আপনি হারিয়েছেন।’

টুইটারে ভারতের রেলমন্ত্রী পিযুশ গয়াল জানিয়েছেন, তরল অক্সিজেনবাহী দুটি ট্রেন বুধবার রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছেছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের আরও ২৫টির বেশি ট্রেন পাঠানো হবে শিগগিরই।

ভারত সরকারের দাবি, অক্সিজেন পর্যাপ্ত থাকলেও পরিবহন ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে সময়মতো ও চাহিদা অনুযায়ী বণ্টন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিভাগের আরো খবর