বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিরামের টিকা পেলে, দ্বিতীয় ডোজ চীনা টিকায় নয়

  •    
  • ৪ মে, ২০২১ ২০:১৩

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে ‘দ্বিতীয় ডোজ’ হিসেবে চীন-রাশিয়ার টিকা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে যারা টিকা নিতে আগ্রহী, তাদের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ হিসেবেই প্রয়োগ করা হবে এই দুই দেশের টিকা।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ অনিশ্চিত হওয়ায় চীন ও রাশিয়ার টিকা জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই দুই দেশের টিকা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে ‘দ্বিতীয় ডোজ’ হিসেবে প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে যারা টিকা নিতে আগ্রহী, তাদের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ হিসেবেই প্রয়োগ করা হবে চীন ও রাশিয়ার টিকা।

অন্যদিকে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর যারা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকবেন, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে আট সপ্তাহের জায়গায় ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বাড়তি এই সময়ের মধ্যেই সিরাম থেকে টিকার পর্যাপ্ত জোগান পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চীনের উপহারের টিকার ৫ লাখ ডোজ আগামী সোমবারের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। তবে প্রথমেই গণহারে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধ প্রশাসনের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে টিকার কার্যকারিতা যাচাই ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে প্রথমে ১ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে চীনের টিকা।

এর আগে ভারতের সিরামের টিকা আনার পরেও একইভাবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। এবারও রাজধানীর কিছু হাসপাতাল নির্ধারণে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেখানে ১ হাজার মানুষের ওপর চীনের টিকা প্রয়োগ করে মান যাচাই ও এক সপ্তাহ ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনের টিকা প্রথম ডোজ হিসেবেই প্রয়োগ করা হবে। রাজধানীর কিছু হাসপাতালে এগুলো প্রথমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। তবে সেই হাসপাতালগুলো এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা হলে বেইজিং থেকে যেকোনো দিন দেশে আসবে চীনের সিনোফার্ম উৎপাদিত ‘বিবিআইবিপি-কোরভি’ টিকা। এ ছাড়া রাশিয়ার টিকা ‘স্পুৎনিক ভি’ এর ৪০ লাখ ডোজও আসার কথা রয়েছে এ মাসেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনের টিকা আমরা যেকোনো দিন পেতে পারি। এ ছাড়া মে মাসের মধ্যে আমরা ওই দেশ থেকে আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা আনার চেষ্টা করছি। যাতে যারা এই টিকা নেবেন তারা যেন (দ্বিতীয় ডোজ) মিস না করেন।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে, সেগুলো তাদের অনেকে ব্যবহার করেনি। তাদের কাছ থেকে এই টিকা পাওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সিনোফার্মের টিকা আমদানি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখন কোনো আইনি বাধা নেই। আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যে হয়তো গণহারে টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারি।’

তিনি জানান, সিরামের টিকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনা হলেও চীনের টিকা দুই সরকারের চুক্তির আওতায় আনা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ৮৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ ডোজ। সরকারের কাছে টিকার মোট মজুত ছিল ১ কোটি ৩ লাখ। সে হিসাবে আর মাত্র ১৫ লাখ টিকা অবশিষ্ট রয়েছে।

প্রতিদিন এখন গড়ে দেড় লাখের উপরে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। সে হিসাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুত শেষ হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে।

এদিকে, সময়মতো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না পেলে যারা প্রথম ডোজ হিসেবে এই টিকা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ পেতে আট সপ্তাহের জায়গায় ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে জটিলতা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা সিরামের প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের আট সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। তবে যদি কোনো কারণে দেরি হয়, যে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা যদি না আসে, তবে আমরা দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

এই সময়ের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে জটিলতা কেটে যাবে বলে আশা করছেন ফ্লোরা।

দুই ডোজের ক্ষেত্রে আলাদা ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর কি না জানতে কিছু দেশে গবেষণা চলছে।

যুক্তরাজ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এ ধরনের একটি গবেষণায় ৮০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর অ্যাস্ট্রেজেনেকা ও ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করা হয়। এই গবেষণার ফল নিশ্চিত হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে দেশে এ ধরনের কোনো গবেষণা না থাকায় সিরামের টিকা দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর সিনোফার্ম বা স্পুৎনিক ভি’র টিকা দেয়া যাবে কি না, তা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজে সেটি ব্যবহার করাই ভালো।

এ বিভাগের আরো খবর