বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনাভীতি মাড়িয়ে মার্কেটে ভিড়

  •    
  • ৪ মে, ২০২১ ১৪:৫৯

ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ ছুটছেন পছন্দের জামা-কাপড় কিনতে। জমজমাট হয়ে উঠেছে মার্কেট ও শপিং মল। ক্রেতা ও বিক্রেতারা পাত্তা দিচ্ছেন না করোনা সংক্রমণের ভয়কে। প্রশাসন কিছুটা ছাড় দেয়ায় ঈদবাজারে অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের প্রয়োজন বিবেচনায় সরকার শর্তসাপেক্ষে মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে বেচাবিক্রি করতে বলা হয়। সেসব নির্দেশনা মানছেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা।

করোনাভীতি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে রংপুর, ফরিদপুর ও মাগুরার মার্কেটগুলোতে। মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই শপিং মলগুলোতে। শারীরিক দূরত্বসহ করোনা সতর্কতা অমান্য করছেন অনেক ক্রেতা।

রংপুরে বেসামাল ভিড়

রংপুরের সালেক মার্কেট, জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্স, তালতলা মার্কেট, রজনীগন্ধা মার্কেট, জেলা পরিষদ মিনি সুপার মার্কেট, সুপার মার্কেট ও এরশাদ হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা যায় নানা বয়সী ক্রেতার ভিড়। চলতি পথে পা ফেলার মতো জায়গা নেই। কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতার মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। রয়েছে শিশু-কিশোররাও।

মার্কেট বা বিপণিবিতানগুলো খুলতে সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিং মল কিংবা দোকানপাটে যাতায়াত করতে হবে। কিন্তু কেনাকাটার তোড়জোড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ দোকান মানুষে ঠাসা। নেই সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই।

শুধু মার্কেট-শপিং মলের ভেতরের দোকানই নয়, মানুষে ঠাসা ফুটপাতের দোকানও। ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অন্যের গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে কাপড়, জুতা, টি-শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনা করছেন। স্বাভাবিক সময়ের মতোই কেনাকাটা চলছে।

রংপুরের একটি মার্কেটের চিত্র

তালতলা মার্কেটের ব্যবসায়ী থ্রিপিস বিক্রেতা মিন্টু মিয়া বলেন, ‘আমরা যারা বিক্রেতা, তারা চেষ্টা করছি দূরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু ক্রেতার চাপে তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। মার্কেটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না করোনাকাল যাচ্ছে। এভাবে ক্রেতা আসলে রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হবে, তাতে ব্যবসার যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে।’

রজনীগন্ধা মার্কেটের রেডিমেড কাপড় ব্যবসায়ী সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মানুষের মনে মরণের ভয় নেই। যেভাবে তারা আসছেন আমাদেরই ভয় লাগছে। আমরা চাই ক্রেতা আসুক কিন্তু তারাও তো সামাজিক দূরত্ব মানবেন। তারাই মানেন না। আমাদের করার কী আছে?’

রংপুর সুপার মার্কেটে কথা হয় লায়লা পারভীন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সামাজিকতা রক্ষা করতে ঝুঁকি নিয়েই মার্কেটে এসেছি। শহরে থাকি, ঈদে গ্রামে যাব। তাই সেখানকার স্বজনদের জন্য কিনতে হচ্ছে, নিজের পরিবারের জন্যও কিনছি। করোনার ভয় তো আছে, তবুও কিনতে হচ্ছে।’

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে চিঠি দিয়েছি সরকারি বিধিনিষেধ মানতে। আমরা বলেছি- নো মাস্ক নো সার্ভিস। কেউ যদি সেটি না করে, প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।’

রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, ‘মার্কেট বা শপিং মল খুলতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি, সেটি অব্যাহত থাকবে।’

ফরিদপুরের মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি উধাও

সীমিত পরিসরে মার্কেট খোলার কথা বললেও রমরমা ফরিদপুরের ঈদবাজার। শহরের নিউ মার্কেট, চকবাজার কাপড় পট্টি, তিতুমীর বাজার, হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারসহ বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে ঈদের কেনাকাটা। এতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শহরের নিউ মার্কেটে আসা আরিফা ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে লকডাউন দেয়ায় সব মার্কেট বন্ধ ছিল। তখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো কেনা হয়নি। এখন সুযোগ পেয়ে করোনার ঝুঁকির মধ্যেও ঘরের জরুরি জিনিসপত্র কিনতে বাজারে এসেছি।’

ফরিদপুর বণিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিলা বলেন, ‘ক্রেতারা মার্কেটে আসা শুরু করেছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বাজার সমিতির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। প্রত্যেক ক্রেতাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছি।’

শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়। কিছু কিছু মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অনেক মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেককে শপিং ব্যাগের মতো মাস্ক হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। কিছু বিক্রেতা মাস্ক মুখে না রেখে কানের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ও নাগরিক মঞ্চের সহসভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘মার্কেটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব, মুখে মাস্ক পরা এসব নিয়ম মানছে না কেউ। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থে। তা না হলে আরও বড় বিপদ সামনে অপেক্ষা করছে।’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘সরকার ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করেই শর্তসাপেক্ষে মার্কেট খুলে দিয়েছে। তবে আমরা লক্ষ্য করছি ক্রেতা বা বিক্রেতার অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আমরা চেষ্টা করছি কমপক্ষে মাস্কের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

করোনা, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাগুরার মার্কেটে ভিড়

স্বাস্থ্যবিধির কিছুই মানছেন না মাগুরার ক্রেতা-বিক্রেতারাও। শহরের বেবি প্লাজা, নূরজাহান মার্কেট, খন্দকার সুপার মার্কেটসহ সব জায়গাতেই এক অবস্থা।

করোনার ভীতি তো নেইই, বৃষ্টিও মানছে না মানুষ।

স্বল্পমূল্যে পোশাক বিক্রি হওয়া পুরাতন বাজার এলাকায় দেখা যায়, ছোট বাচ্চা নিয়ে গ্রাম থেকে এসেছেন শতাধিক নারী।

মাগুরার একটি মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের ভিড়

সদরের আলোকদিয়া গ্রাম থেকে বাচ্চাদের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন সালেহা বেগম। সঙ্গে এসেছেন পরিবারের অন্তত সাতজন বিভিন্ন বয়সী নারী। তাদের কোলেও চারটি বাচ্চা।

সালেহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা গ্রামে নেই। আমরা অনেক নিরাপদ আছি। তাই সবাই শহরে আসছি ঈদের কেনাকাটা করতে। এখানে মাস্ক ব্যবহার করতেছি না। ঘন্টাখানিক থাকলে কিচ্ছু হবে না করোনায়।’

শহরের সুপার মার্কেটে কেনাকাটায় ব্যস্ত আবু সালেক বলেন, ‘মুখে মাস্ক নিয়েও তো কাজ হচ্ছে না। চারপাশে সবাই চেপে ধরেছে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বিপদে পড়েছি। সামাজিক দূরত্ব তো দূরে থাক, মুখে মাস্কও নেই। বললে বলে আপনার মত করোনায় ভয় আমাদের নেই।’

বেবি প্লাজার কাপড়ের দোকানি সোহাগ বলেন, ‘আমরা মার্কেটের গেটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কে যেন চুরি করে নিয়ে গেছে। এভাবে কয়েকবার সাবান, স্যানিটাইজার চুরি হয়েছে। তাই আর ওসব ঝামেলায় যাচ্ছি না।’

শহরের জুতা পট্টির নাইট সুজের মালিক হান্নান মিয়া জানান, জুতার প্রচুর চাহিদা। সরু দোকান হওয়ায় ভিড় সামলাতে পারছেন না। অনেক ক্রেতাই মাস্ক পরছেন না। কিছু বললে দোকান থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।

ভারতে এখন করোনার ভয়াবহ অবস্থা চলছে। মাগুরা থেকে কলকাতার দূরত্ব খুব বেশি না। করোনাভাইরাসের ইন্ডিয়ান ভেরিয়্যান্ট এখানে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মাগুরা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, সরকারি নির্দেশনায় তারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিছু জায়গায় নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে শুনেছেন। সেখানে সেখানে সমিতির পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও না শুনলে প্রশাসনই ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাস্ক না পরলে নিয়মিত জরিমানা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ যদি নিজের ভালো না বোঝে তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে!’

এ বিভাগের আরো খবর