দেশে ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোর জিনোম সিকোয়েন্স করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ জন্য ভারত থেকে আসা করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি।
দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় নিয়ে সোমবার অনলাইনে স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
ভারতে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর জন্য দায়ি করা হচ্ছে করোনার ভারত ভ্যারিয়েন্টকে। এর মিউটেশন ক্ষমতা অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় দ্বিগুন বলেও দাবি করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে ভ্যারিয়েন্টটির প্রবেশ ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে যাত্রী যাতায়াতের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। নেয়া হয়েছে বেশ কিছু পরিকল্পনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট করোনা প্রতিরোধে যারা ওই দেশ থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে আসছেন তাদের নমুনার সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
‘আপনার জানেন, জিনোম সিকোয়েন্স করতে কিছু দিন সময় লাগে। আমরা এ বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম রোববার বলেন, ‘করোনায় ভারতের ভ্যারিয়েন্ট যেন আমাদের দেশে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য ভারতের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এটি হয়তো আরও বাড়ানো হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত বন্ধ থাকার পরও যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে আসেন, তাদের শরীরে ভারতের ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা হবে। সে জন্য নমুনা আইসিডিডিআর বি’তে পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে।’
নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রতিরোধে টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছে তাদের অবশ্যই ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।
‘আমাদের টিকার কিছু সংকট রয়েছে। সেই সংকট নিরসনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যদি আমরা সিরামের টিকা না পাই তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে পরবর্তীতে আমার সিদ্ধান্ত নেব।’
তবে টিকার সংকট দেখা দেয়ার আগেই সিরামের টিকা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গণটিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এরই মধ্যে সরকার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। চলতি মাসের মধ্যে চীন থেকে ৫ লাখ টিকা আসবে। এ সময়ের মধ্যেই রাশিয়া থেকেও ৪০ লাখ টিকা আসবে। যারা প্রথম ডোজ এখন পাননি তাদের টিকা আসার পর টিকা প্রথম ডোজ দেয়া হবে বলে বুলেটিনে জানান নাজমুল ইসলাম।
সিরাম উৎপাদিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে আট সপ্তাহের ব্যবধান থাকলে সেটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তবে ১২ সপ্তাহ পরেও দেয়া যায় এই টিকা।
টিকার মজুত সীমিত জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম ডোজ নিয়েছে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০৯ জন। গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ২৯ লাখ ৪০ হাজার ২৪১ জন। সে হিসাবে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য আমাদের কাছে খুব কম টিকা আছে।’
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে করোনা টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এর আওতায় দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।
ভারত সরকারের দুই দফা উপহারের ৩২ লাখ ডোজ মিলে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা আসে দেশে। যে টিকা এখন হাতে আছে, তা দিয়ে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে এখনো ১৩ লাখের বেশি।
চীন ও রাশিয়ার কাছে থেকে কবে টিকা পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি সরকার। চূড়ান্ত চুক্তিও হয়নি এখনও। এই টিকা দেশে এলে আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা হবে। এরপর শুরু হবে গণটিকা।