সময়মতো টিকা না পেলে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে আট সপ্তাহের জায়গায় ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার বিকেলে এ তথ্য জানান। গণটিকা কর্মসূচির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এ তথ্য জানান।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। যাদের সিরামের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের ৮ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার জন্য। তবে যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয়, যে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা যদি না আসে, তবে আমরা দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলব।’
সরকার গণটিকা শুরু করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা দিয়ে। কার্মসূচি শুরুর সময় হাতে টিকা ছিল ৭০ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশের কেনা ৫০ লাখ, আর ভারতের উপহার হিসেবে ছিল ২০ লাখ।
পরে সিরাম পাঠায় আরও ২০ লাখ এবং ভারত উপহার হিসেবে পাঠায় আরও ১৩ লাখ।
করোনার টিকা একজনকে দিতে হয় দুই ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ ৫৮ লাখ দেয়ার পর সরকার সেটি বন্ধ করে এখন কেবল দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিচ্ছে। তবে যে টিকা মজুত আছে, তা দিয়ে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না। ঘাটতি আছে ১৩ লাখের বেশি।
প্রথম ডোজের টিকা বন্ধ করে দেয়ার কারণ সিরাম আর টিকা দিতে পারছে না। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় ৫০ লাখ টিকা পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশে।
এই পরিস্থিতিতে টিকার জন্য চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। দুটি দেশ থেকে টিকা আসার পাশাপাশি দেশেও উৎপাদন করতে চায় সরকার।
তবে এই টিকা আসতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। আর সে টিকা এলেও সিরাম থেকে আরও প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টিকা না এলে যারা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তাদের সবাইকে টিকা দেয়া যাবে না।
টিকা নিয়ে এই অনিশ্চয়তার কারণে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রয়োগও পেছাতে পারে। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ পর দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আরও চার সপ্তাহ অপেক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিরাম উৎপাদিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে আট সপ্তাহের ব্যবধান থাকলে সেটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তবে ১২ সপ্তাহ পরেও দেয়া যায় এই টিকা।
আবার চীনা ও রাশিয়ার টিকা কবে প্রয়োগ করা যাবে সেটিও এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। এই টিকা দেশে এলে আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা হবে। এরপর শুরু হবে গণটিকা।
মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘রাশিয়া ও চীনের টিকা কবে আসবে, কবে চুক্তি হবে তা চূড়ান্ত নয়। যদি টিকা না আসে আমরা দ্বিতীয় ডোজ নেবার জন্য ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলব।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘করোনায় ভারতের ভ্যারিয়েন্ট যেন আমাদের দেশে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য ভারতের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এটি হয়তো আরও বাড়ানো হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত বন্ধ থাকার পরও যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে আসেন, তাদের শরীরে ভারতের ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা হবে। সেজন্য নমুনা আইসিডিডিআরবিতে পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে।’