বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সতর্কবার্তা শোনেনি সরকার, অভিযোগ ভারতের বিজ্ঞানীদের

  •    
  • ১ মে, ২০২১ ১৩:৩৯

ইনসাকগ ফোরামের বিজ্ঞানী ও পরামর্শক কমিটির সভাপতি শহীদ জামিল বলেন, ‘হয়তো সরকার মনে করেনি গবেষণায় প্রাপ্ত ফল খুব বেশি সঠিক। সে কারণে তারা এতে মনোযোগী হয়নি।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে পরামর্শ পেতে বিজ্ঞানীদের পাঁচ সদস্যের একটি ফোরাম গঠন করেছিল ভারত সরকার। সে ফোরাম ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে মার্চের শুরুর দিকে সরকারকে সতর্ক করে। কিন্তু সরকার সে সতর্কবার্তায় কান দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ফোরামের চার বিজ্ঞানীর ভাষ্য, সতর্ক করার পরও কেন্দ্রীয় সরকার ভাইরাসটির বিস্তার রোধে কোনো ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করেনি। উপরন্তু এ সময়ে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই লাখ লাখ মানুষ ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিরোধী দলের নেতারা এ সময়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করেছেন।

সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদির কৃষি বিলের বিরোধিতা করে দিল্লিতে হাজার হাজার কৃষক বিক্ষোভ করেছে। তারা সেখানে অবস্থানও করেন এক মাসের বেশি সময়।

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটি এখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করছে। প্রথম বছরের তুলনায় দেশটিতে সংক্রমণ বেড়েছে কয়েক গুণ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রিটেনের ভ্যারিয়েন্ট দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। শনিবার এক দিনে দেশটিতে ৪ লাখের বেশি শনাক্ত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর ভারতের এক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও বিজ্ঞানী বলেন, ভারতের সার্স-কোভ-২ জেনেটিক কনসোর্টিয়াম বা ইনসাকগ (আইএনএসএসিওজি) মার্চের শুরুতেই দেশটিতে নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে সতর্ক করে। প্রধনমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে এমন একটি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোও হয়।

তবে সেই সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি কেউ।

জনস্বাস্থ্যের হুমকি মোকাবিলায় করোনাভাইরাসের জিনোম ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে গত ডিসেম্বরে সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শদাতা হিসেবে বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে ইনসাকগ গঠন করা হয়।

ভাইরাসটির ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে জাতীয় পর্যায়ে ১০টি ল্যাবরেটরিতে ইনসাকগ তাদের কাজ শুরু করে।

ইনসাকগের সদস্য ও সরকার পরিচালিত ইনস্টিটিউট অফ লাইফ সায়েন্সের পরিচালক অজয় পারিদা বলেন, ফোরামটির গবেষকরা প্রথমবারের মতো ভাইরাসটির বি.১.৬১৭ (যাকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলা হচ্ছে) শনাক্ত করে। সেটিও ফেব্রুয়ারির শুরুতেই।

ইনসাকগ তাদের প্রাপ্ত ফলগুলো স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলকে (এনসিডিসি) ১০ মার্চের আগেই জানিয়ে সতর্ক করে। ফোরামটি সতর্ক করে দেয়, দেশের বিভিন্ন অংশে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

অজয় পারিদা বলেন, ‘এ সবই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল।’

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি।

সে সময় পাওয়া তথ্য থেকে ইনসাকগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বিবৃতির খসড়াও তৈরি করে দেয়। সেই খসড়া থেকে দেখা যায়, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশনের দুটি বিষয় লক্ষ্যণীয় ছিল।

প্রথমত, ভাইরাসটি মানুষের কোষের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়। দ্বিতীয়ত, মহারাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত নমুনার মধ্যে ১৫-২০ শতাংশই তখন এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে যায়।

খসড়ায় বলা হয়, ই৪৮৪কিউ এবং এল৪৫২আর মিউটেশনগুলো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।

এতে বলা হয়, ই৪৮৪কিউ মিউটেশন অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরির পরও শরীরে সক্রিয় থাকতে পারে। এল৪৫২আর মিউটেশন দ্রুত ছড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে।

সহজ কথায়, এই ভ্যারিয়েন্ট খুব সহজেই মানুষের কোষের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

বিজ্ঞানীদের ফোরামটি সরকারকে জানানোর দুই সপ্তাহ পর ২৪ মার্চ মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেয়। সেই বিবৃতির কোথাও বলা হয়নি বিষয়টি ‘অতি উদ্বেগের’।

বিবৃতিতে শুধু বলা হয়, নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে সেটি আরও বেশি সমস্যাজনক। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। তবে আরও বেশি করে পরীক্ষা করার ওপর জোর দেয়ার কথা জানায় মন্ত্রণালয়।

কেন এমন সতর্ক করার পরও সরকার বিষয়টিতে খুব বেশি নজর দেয়নি জানতে চাইলে ইনসাকগ ফোরামের বিজ্ঞানী ও পরামর্শক কমিটির সভাপতি শহীদ জামিল বলেন, ‘হয়তো সরকার মনে করেনি গবেষণায় প্রাপ্ত ফল খুব বেশি সঠিক। সে কারণে তারা এতে মনোযোগী হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘পলিসি কী হবে সেটা তো প্রমাণের ভিত্তিতে; অন্য কোনো কিছুর ওপর নয়।

‘আমার উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, এখানে বিজ্ঞানকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি জানি কোথায় গিয়ে আমার থামতে হবে। বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা প্রমাণ হাজির করতে পারি; পলিসি তৈরির কাজ পুরোটাই সরকারের।’

এ বিভাগের আরো খবর