করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় হাসপাতালে মেডিক্যাল অক্সিজেনের তীব্র সংকটে ভুগছে ভারত। অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। আর অন্যদিকে ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে রোগীর পরিবার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অক্সিজেন চেয়ে একের পর এক পোস্ট দিচ্ছেন ভারতীয়রা। দেশটির কালোবাজারে ৩০ গুণ বেশি দামে অক্সিজেন বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এমন বাস্তবতায় রাজধানী নয়াদিল্লিতে কোভিড রোগীদের বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা দিতে ‘অক্সিজেন লঙ্গর’ খুলেছে শহরটির দুটি গুরুদুয়ারা।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আল জাজিরা জানিয়েছে, বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা দেয়া শিখ সম্প্রদায়ের দুটি মন্দির বা গুরুদুয়ারার একটি নয়াদিল্লির কৈলাশ এলাকায়। সেখানে শূন্য হয়ে যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার ফের পূর্ণ করা হচ্ছে।
নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদ এলাকার অন্য আরেকটি গুরুদুয়ারা প্রাঙ্গণে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে একসঙ্গে প্রায় ৮০ জনের মতো করোনা রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে।
অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জরুরি অন্যান্য চিকিৎসা সেবার জন্য হেল্পলাইনও খুলেছে ওই দুই গুরুদুয়ারা।
এ ছাড়া রাজধানীসহ ভারতের অন্যান্য শহরের গুরুদুয়ারা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ঘরে বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহেরও উদ্যোগ নিয়েছে।
শুক্রবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়, যা দৈনিক সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বরেকর্ড। ওই সময় ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয় ৩ হাজার ৪৯৮ জনের।
টিকার ঘাটতিতে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ
আগামীকাল শনিবার থেকে ভারতজুড়ে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। কিন্তু দেশটির কয়েকটি রাজ্যে টিকা ফুরিয়ে যাওয়ায় কর্মসূচিটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ওইসব রাজ্যের প্রশাসন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক দেশ। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত টিকার মজুত দেশটিতে এখন নেই। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ১ মে থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দেশটির জনসংখ্যার কেবল ৯ শতাংশকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে।
ভারতের নাগরিক জেসমিন ওঝা টুইট বার্তায় বলেন, ‘২৮ দিন আগে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছি। এখন আমাকে জানানো হয়েছে, মজুতে টিকা নেই।’
মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরে শুক্রবার থেকে টানা তিন দিন টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শহরটির কর্তৃপক্ষ।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের কর্ণাটক রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর বলেন, ‘রাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের করোনার টিকাদান কর্মসূচি আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে না। কবে নাগাদ আমরা টিকা পাব, এ বিষয়ে টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো আমাদের কিছু জানায়নি।’