কোভিড ১৯ এর জন্য দায়ী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দুই ডোজের টিকা নিয়ে বেশি দিন নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। এ ভাইরাস প্রতিরোধে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অন্যতম গবেষক ড. ওজলেম তুরেসি বলেছেন, সাধারণ ফ্লু বা সর্দি-জ্বরের টিকার মতোই প্রতি বছর নিতে হতে পারে করোনার টিকাও।
কোভিড ১৯ রোগ ঠেকাতে বিশ্বে এ পর্যন্ত যে কয়টি টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, তার অন্যতম ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের যৌথ গবেষণার ফসল এ টিকা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অন্যান্য টিকার তুলনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকাটি।
বায়োএনটেকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ মেডিক্যাল অফিসার ড. ওজলেম তুরেসির মনে করছেন, করোনাভাইরাস ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করায় থাকায় মানবদেহে টিকাটির কার্যকারিতাও কমে আসছে।
তাই শুধু যে প্রতি বছর টিকাটি নিতে হতে পারে তাই নয়, একই সঙ্গে দুই ডোজের এ টিকায় যুক্ত হতে পারে আরও একটি বুস্টার ডোজ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে ড. ওজলেম তুরেসি বলেন, এতদিন দ্বিতীয় ডোজকে ‘বুস্টার শট’ বলা হলেও এরপর হয়তো ‘বুস্টার শট’ হবে তৃতীয় ডোজটিই।
বুধবার এক সাক্ষাৎকারে ওজলেম তুরেসি জানান, টিকার মাধ্যমে মানবদেহে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে কমে আসে।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করছি আমরা। শুধু তাই নয়, মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে, সার্স-কোভ-টু’র বিরুদ্ধে সে ক্ষমতাও দিনে দিনে কমছে। এমনকি সম্প্রতি যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন কিংবা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যেও সেরে ওঠার পরপরই করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে দেখা গেছে।
এর আগে একই মত প্রকাশ করেন ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলবার্ট বুর্লাও।
গত ১৫ এপ্রিল সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১২ মাসের মধ্যে টিকার তিনটি ডোজে নিতে হতে পারে ব্যক্তিকে। এ বছরই ‘বুস্টার শট’ হিসেবে তৃতীয় ডোজ আনার আভাসও দেন তিনি।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘বুস্টার শট’-এর অর্থ হলো আগে এক বা একাধিক ডোজ নেয়ার পর অতিরিক্ত আরেকটি ডোজ। টিকার প্রথম এক বা একাধিক ডোজ নেয়ার পর মানবদেহে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি উৎপাদন করতে শুরু করে অ্যান্টিজেন। সে সময় অ্যান্টিজেনের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিতে দেয়া হয় ‘বুস্টার শট’ বা ‘বুস্টার ডোজ’।
এতোদিন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুই ডোজের টিকাই যথেষ্ট বলে মনে করছিলেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রথম ডোজ টিকা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ৯১ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছিল। দুই ডোজ সম্পন্নের পর কমপক্ষে ছয় মাস পর্যন্ত টিকার কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশের বেশি বলা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান মডার্নার করোনা প্রতিরোধী টিকাও ফাইজারের মতো একই প্রযুক্তিতে তৈরি। এ টিকাও ডোজ সম্পন্নের পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ কার্যকর বলে জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
দুই ডোজ নেয়ার ছয় মাস পর থেকে টিকা কতোটা সুরক্ষা দেবে করোনা থেকে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বেশিরভাগ গবেষক। তবে ধীরে ধীরে টিকার কার্যকারিতা যে কমবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত প্রায় সব স্বাস্থ্যবিদ।