বিধিনিষেধের মধ্যে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফেরা তিনজনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তারা ভারতে গিয়ে ভাইরাসটিকে আক্রান্ত হন।
সীমান্ত বন্ধ থাকলেও যারা বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের সবার করোনা পরীক্ষা করে এদের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
আগে থেকেই ভারত ফেরত আরও সাতজন করোনা রোগী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়াল ১০ জনে।
এই সাতজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে ধরে এনে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে এদের সঙ্গে যারা মিশেছেন তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং বা করোনার নমুনা সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। ফলে তারা এরই মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকতে পারেন।
করোনার নতুন স্ট্রেইন বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অক্সিজেনের অভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে।
ভারতের এই অভিজ্ঞতা দেখে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সুপারিশে সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় সীমান্ত। তবে যারা চিকিৎসা বা অন্য কাজে গিয়ে ভারতে আটকা পড়েছে, তাদেরকে দেশে ফেরার সুযোগও দেয়া হয়।
তবে যারা দেশে আসতে চান তাদেরকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। পাশাপাশি থাকতে হয় করোনা নেগেটিভ সনদ।
আবার দেশে এলে ১৪ দিন থাকতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। সেখানে করা হয় করোনার পরীক্ষা।
সীমান্ত বন্ধের পরে গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভারতে আটকে পড়া ৪৩৯ জন বাংলাদেশি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন।
একই সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ৬৭ জন।
তবে নতুন করে পাসপোর্ট যাত্রীদের ভারত ও বাংলাদেশ ভ্রমণ এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
দেশে আসা বাংলাদেশিদের বেনাপোল পৌর এলাকার সাতটি আবাসিক হোটেলে ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে প্রশাসন।
চিকিৎসা শেষে হাতে খরচের টাকা না থাকায় ভারত ফেরত বাংলাদেশিরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সরকারি নির্দেশনা মানতে তাদের বাধ্য হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান জানান, কোয়ারেন্টিতে তাদের থাকতেই হবে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে আগে ৪০টি করোনা বেড ছিল, বর্তমানে ১০টি বাড়ানোয় ৫০টি করোনা বেড আছে। এর মধ্যে ৩৮টি বেডে রোগী ভর্তি আছে, ১২টি বেড খালি। ভারত থেকে আরও করোনা আক্রান্ত কেউ যদি আসে তাহলে এখানে রাখা হবে।
তবে ভারতফেরতদের কোয়ারেন্টাইন নিয়ে জানে না স্বাস্থ্য প্রশাসন। জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘কতজন করোনা আক্রান্ত হয়েছে এটা সম্পর্কে আমি এখনও কোনো তথ্য পাইনি। তথ্য পেলে জানাতে পারব।’
হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া করোনা রোগীদের কন্ট্রাক ট্রেসিং করা সম্ভব হয়েছে কি না এটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন, ‘দূতাবাসের ছাড়পত্র থাকায় আটকে পড়া যাত্রীদের ৪৩৯ জন ভারত থেকে ফিরেছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্টযাত্রী নতুন করে ভারতে যাননি এবং কোনো ভারতীয় বাংলাদেশে আসেননি।’
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক আছে। বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা সবাই যেন যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তার জন্য আবারও সচেতন করা হবে। ট্রাক চালকরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য পরিবহন করছে।