শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা গর্ভপাতের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৪০ শতাংশেরও বেশি।
এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাতটি দেশের ৪৬ লাখ নারীর গর্ভকালীন ডাটা বিশ্লেষণ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট। এতে দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ হলে গর্ভপাতের ঝুঁকি ৪৩ শতাংশ বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের প্রথম গর্ভপাতের পর তাদের সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ল্যানসেট। সাধারণত পরপর তিনবার গর্ভপাত হলে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করা হয়।
যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ গর্ভপাতের বিষয়ে যথাযথ পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে না। গর্ভপাতের হিসাবেও কখনো কখনো তারতম্য দেখা যায়। এটা ঘটে মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গর্ভপাতকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করছে, তার ওপর।
সাত দেশের ডাটাভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভধারণের পর ১৫ শতাংশ নারী শেষ পর্যন্ত গর্ভপাতের শিকার হন। এক শতাংশ নারী বারবার গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে যান।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর নারীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত রক্তজমাট, হৃদরোগ, বিষণ্নতাসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে।
গবেষণায় উঠে আসে, কৃষ্ণাঙ্গ নারী ডরিন থমসন-আড্ডোর সাতবার গর্ভপাত হয়।
তিনি বলেন, ‘প্রথম যেবার গর্ভধারণ করি, তখন মনে খুব উত্তেজনা কাজ করে। অনাগত শিশুর নাম কী হবে, তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়।’
কিন্তু দুই মাসের মধ্যে ডরিনের রক্তপাত শুরু হয়। সন্তান হারান তিনি।
এ নিয়ে ডরিন বলেন, ‘গর্ভপাত খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে আমরা জানি। কিন্তু নিজেকে এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, কখনো তা ভাবিনি।’
প্রথম গর্ভপাতের পর ডরিনকে গর্ভধারণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেন তার স্বজনেরা। ২০১৭ সালে ডরিনের মেয়ে অ্যারিয়েলের জন্ম হয়।
তৃতীয় গর্ভপাতের পর ডরিনকে হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করা হয়। তবে কেন তার বারবার গর্ভপাত হচ্ছে, তা বের করা যায়নি।
ল্যানসেটের গবেষণা দলে ছিলেন টমি’জ ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসক্যারেজ রিসার্চের ডেপুটি ডিরেক্টর ও ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইকের অধ্যাপক সিউভান কুয়েনবাই।
তিনি বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি, তা আমরা জানি। তবে গর্ভপাতের ঝুঁকিও তাদের বেশি, তা জেনে আমি রীতিমতো বিস্মিত।’
কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এ দুই শারীরিক জটিলতা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কুয়েনবাই বলেন, ‘ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা (যেমন: জরায়ুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অটোইমিউন ডিজঅর্ডার) গর্ভপাতের কারণ হতে পারে কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।’