সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা পেতে ভারত সরকারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। বলেছেন, শিগগিরই টিকা এসে যাবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটিকে রপ্তানিতে ভারত সরকার মানা করার পর বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে এই কথা বললেন মন্ত্রী।
মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীতে চিকিৎসকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রাঙ্গণে ‘ভ্যাকসিন ইস্যু ও সমসাময়িক নানা বিষয়’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে দেশে। এরপর প্রতি মাসে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ করে।
কিন্তু মার্চে ২০ লাখ টিকা পাঠায় সিরাম। এরপর আর কোনো টিকা আসেনি। তবে ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ টিকা।
সিরামের লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা বলেছে, তারা এক কোটি ৪০ লাখ টিকা পেতে সিরামকে টাকা দিয়েছে। সিরাম ৫০ লাখ টিকা বাংলাদেশকে দিতে প্রস্তুত রেখেছে। কিন্তু ভারত সরকার অনুমোদন দিচ্ছে না। এখন সরকার যেন ভারতকে চাপ দেয়।
টিকা না পাওয়ায় করোনার প্রথম ডোজের টিকা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কেবল আগে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় জোডের টিকা দেয়া হচ্ছে।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত ৫ নভেম্বর সমঝোতা স্মারক সই হয় সরকারের। পরে ডিসেম্বরে হয় চু্ক্তি। ফাইল ছবি
আবার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলছে সরকার। এরই মধ্যে রাশিয়া উদ্ভাবিত স্পুৎনিক ফাইভ অনুমোদন দিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করেছে। এটি অনুমোদন হয়ে যাবে যেকোনো সময়।
পাশাপাশি চীনের একটি উদ্যোগেও শামিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চীনসহ ছয় দেশের মধ্যে বৈঠক হতে যাচ্ছে দুপুরে।
এই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে করা সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিন কোটি টিকার জন্য টাকা নিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা সঠিক সময়ে টিকা পাচ্ছি না। এ জন্য আমরা যোগাযোগ করছি।
‘কিছুই দিনের মধ্যে হয়তো আসবে। এখনই তারিখ বলতে পারছি না। টিকা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে যাবে।’
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ২১ লাখ টিকা আসবে বলে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই সিরাম থেকে ২০ লাখ টিকা আসবে।
ফেব্রুয়ারির শেষে ৫০ লাখের পর মার্চে টিকা আসে ২০ লাখ। এরপর আর কোনো টিকা পাঠায়নি সিরাম ইনস্টিটিউট। ফাইল ছবি
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা টিকা পেতে কেবল সিরামের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি না। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। আশা করা যায়, টিকার কোনো সংকট হবে না।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি রাশিয়ার টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদনের যে সুপারিশ করেছে সেটি নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়া ও চীনের টিকা এ ছাড়া আরও যে সংস্থা অনুমোদনের আবেদন করেছে, তাদের বিষয়েও সরকার সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছে। রাশিয়ারিটি এরই মধ্যে অনুমোদনের সুপরিশ করেছে। বাকিগুলোও ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানায়
সরকার বারবার তাগাদা দিয়ে এলেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহার কারণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে ভুল করেছি সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী চলতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সমাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে করতে হবে।’
গত বছরের মার্চে দেখা দেয়া করোনার প্রাদুর্ভাব চলতি বছরের মার্চের আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে চলে আসে। তবে ওই মাস থেকে আবার বাড়তে বাড়তে সংক্রমণ গত বছরকে ছাড়িয়ে যায়।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণের উদাসীনতা নিয়ে বারবার আলোচনা হচ্ছে। জরিমানা করেও মাস্ক পরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। ছবি: সংগৃহীত
এই পরিস্থিতিতে হত ৫ এপ্রিল থেকে দেয়া হয়েছে লকডাউন, যা আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।
চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে
করোনার রোগী বৃদ্ধির কারণে শয্যা ও আইসিইউ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে বেড বেড়েছে। আইসিইউ বৃদ্ধি হয়েছে। সারা দেশের ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন দেয়া হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় ২০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
‘ঢাকায় করোনার জন্য আড়াই হাজার বেড ছিল। এখন সাত হাজার বেড করা হয়েছে। এটা আমরা রাতারাতি করতে সক্ষম হয়েছি। মাত্র ২০ দিনে ডিএনসিসি মার্কেটে এক হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। এখানে ২০০টি আইসিইউ করা হয়েছে।’
আইসিইউতে রোগীপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই ব্যয়ও সরকার বহন করছে।