করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রাপ্যতা ও চলমান সংকট নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। তবে এতে রাখা হয়নি ভারতকে।
মঙ্গলবার দুপুরের যেকোনো সময়ে সময় এই বৈঠক শুরু হবে। এতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নেতৃত্ব দেবেন।
অপর পাঁচজন হলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমার, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাকদুম শাহ মোহাম্মদ কুরেশি, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে ও নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদ্বীপ গাওয়ালি।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি একদিনের সফরে ঢাকায় পা রাখার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এ ঘোষণা এলো।
চীনের উদ্যোগে বাংলাদেশসহ ছয় দেশের টিকার মজুত তৈরির চেষ্টার অংশ হিসেবে এ বৈঠক হচ্ছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।
মন্ত্রণালয় বলছে, ভারত নিজেই এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে জর্জরিত। টিকার জন্য বাংলাদেশ আগাম টাকা দিলেও ভারত চালান পাঠাতে পারছে না।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে দ্রুত টিকা পাঠানোর অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি বিকল্প উৎসর খোঁজেও অগ্রসর হয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, করোনা দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারে আঁচ করে চীনের উদ্যোগে ছয় দেশের টিকার মজুত সৃষ্টির পথেও হাঁটছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীনের উদ্যোগে বৈঠক হচ্ছে। সেখানে এই ছয় দেশের টিকার মজুত গড়ার কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।’
মোমেন জানান, মনে হচ্ছে যে, করোনা খুব সহজে যাচ্ছে না। তাই দীর্ঘমেয়াদে টিকা প্রয়োজন হবে। তা ছাড়া আগামী দিনে করোনার মতো মহামারির ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে মজুত কাঠামো সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা চলছে। টিকা নিয়ে এত দুশ্চিন্তার কারণ নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাসময়ে পর্যাপ্ত টিকা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘ভারতের দুটি চালান আসতে দেরি হয়ে গেছে। ভারত আমাদের বলেছে যে তারা পাঠাবে। কিন্তু তাদের নিজেদেরই চাহিদা এত বেশি যে ঝামেলায় পড়েছে।
‘ভারত যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, যাতে আমাদের চালান পাঠাতে পারে। যদি কোনো কারণে ভারতের চালান না আসে, সে জন্য আমরা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবস্থা করে রেখেছি। যারা এ দেশ থেকে চীনে পড়ালেখা, ব্যবসা করতে যান তারা বলছেন, চীনা টিকা না নিলে তারা সেখানে ঢুকতে পারবে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের যথেষ্ট উৎপাদন ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশ যত ডোজ চাইবে চীন তা দিতে পারবে। তারা ছয় লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দেবে। বাকিটা কিনতে হবে। এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে। যেকোনো সময় তারা টিকা সরবরাহ করতে পারবে।
রাশিয়ার টিকা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী টিকা দিতে পারবে না। তাদের কাছ থেকে কিছু কিনতে হবে। তারা এ দেশের ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে উৎপাদনে যেতেও রাজি আছে।
মোমেন জানান, রাশিয়া বাংলাদেশকে প্রযুক্তি দেবে। এটি অন্য কাউকে দেয়া যাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে দুই-তিন মাস সময় লাগবে। আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। রাশিয়াই ঠিক করবে তারা এ দেশের এক বা একাধিক ওষুধ কোম্পানিকে করোনার টিকা উৎপাদনের সুযোগ দেবে কি না। ওই টিকা একটু দামি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট টাকা রেখেছেন টিকা কেনার জন্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে টিকা সরবরাহ করতে পারে সেজন্য ঢাকায় একটা স্টোরেজের কথা চিন্তা করছে। সেখানে কী কী জিনিস থাকবে এবং কীভাবে সরবরাহ পাওয়া যাবে সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ এতে আগেই রাজী হয়েছে। এই স্টোরেজ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সহজে ও দ্রুত প্রয়োজনীয় টিকা নিতে পারবে।
‘বাংলাদেশের মূল আগ্রহের জায়গা হচ্ছে টিকা সংক্রান্ত সহযোগিতা। যেমন, ইমারজেন্সি সরবরাহ। আমরা সব সময় অপশন খোলা রাখতে চাই। যেখানে আমাদের সুযোগ আছে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা আছে, সেগুলো আমরা পরীক্ষা করতে চাই। আমরা খোলা মন নিয়ে যাব।’