বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা নিয়ে বাংলাদেশকে পাঠানো ভারতের চিঠিতে অস্পষ্টতা

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:০৪

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতীয় হাইকমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে তারা টিকা দিতে পারবে না। ভারতে ক্রমেই কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী জুন মাসের আগে সিরাম থেকে টিকা আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এমনকি ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সময় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা ও দিল্লির সংশ্লিষ্টরা।

চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে কেনা টিকার বাকি ডোজগুলো সরবরাহ করবে কি না এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছে না ভারত সরকার। তবে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ভারতীয় হাই কমিশন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো এই নোট ভারবাল বা চিঠিতে বলা হয়েছে, সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ‘কোভিশিল্ড’ টিকা উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহে মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা টিকা উৎপাদনে বাধা তৈরি করেছে। এ ছাড়া ভারতে অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে।

ভারতীয় হাইকমিশনের পাঠানো চিঠির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে। দিল্লীর ওই চিঠিতে বলা হয়, কাঁচামালের সংকট ও ভারতে বিপুল অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে ভ্যাকসিন সরবরাহে দেরি হচ্ছে।

সিরামের টিকা উৎপাদনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। টিকা উৎপাদনে পর্যাপ্ত কাঁচামাল ছাড় দিচ্ছে না দেশটি। কাঁচামালে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আগে থেকেই আহ্বান জানিয়ে আসছে সিরাম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আদর পুনাওয়ালা সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় যদি আমরা প্রকৃত অর্থেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থিত টিকাশিল্পের পক্ষ হয়ে বিনীতভাবে বলতে চাই, কাঁচামাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন। এর মাধ্যমে টিকা উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’

ভারতীয় হাইকমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনায় বিপর্যস্ত ভারত প্রথমে তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সিরাম ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাকসিন সরবরাহের যেসব চুক্তি করেছিল, সেই অনুযায়ী ভ্যাকসিন উৎপাদনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

নোট ভার্বালে নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ না করে দিল্লি থেকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে তাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে তারা টিকা দিতে পারবে না। ভারতে ক্রমেই কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী জুন মাসের আগে সিরাম থেকে টিকা আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এমনকি ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সময় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা ও দিল্লির সংশ্লিষ্টরা।

চুক্তি অনুযায়ী সিরাম টিকা সরবরাহ না করায় সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ছবি: নিউজবাংলা

ভারতের পক্ষ থেকে টিকা বিষয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলা হলেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আশ্বাসের খবর জানানো হয়েছে। নিউজবাংলাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ২১ লাখ টিকা আসছে। ১ লাখ কোভ্যাক্স দেবে। আর ২০ লাখ দেবে সিরাম ইনস্টিটিউট।’

কিন্তু টিকা বিষয়ে ঘুরেফিরে অনিশ্চয়তার কথাই আছে ভারতীয় হাইকমিশনের চিঠিতে। এতে বলা হয়েছে, সিরাম ইনস্টিটিউট প্রতিমাসে ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদন করছে এবং ভারত বায়োটেক করছে ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন। এর বিপরীতে ভারতই প্রতিদিন টিকা নিচ্ছে প্রায় তিন মিলিয়ন। বর্তমানে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা শুধু তারই টিকা নিতে পারবেন। তবে ১ মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকা দেয়া হবে।

‘বর্তমানে ভারতে টিকার যে চাহিদা রয়েছে, ১ মে থেকে তা অনেক বাড়বে। কারণ, পরিস্থিতি খারাপ দেখে অনেকেই টিকা নিতে চাইছেন, যা প্রথমে কম ছিল।’

প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ সরকার, যা ধাপে ধাপে দেশে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু দুই ধাপে কেনা টিকার ৭০ লাখ ডোজ টিকা আসলেও বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশি ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোকে সঙ্গে নিয়ে গত ৫ নভেম্বর সিরামের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। চুক্তি অনুসারে প্রতিমাসে বাংলাদেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর কথা সিরামের। এভাবে ছয়মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা।

জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসলেও ফ্রেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। এরমধ্যে অবশ্য ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারের হাতে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা। মার্চ গেল এপ্রিলও শেষের পথে। কিন্তু কোনো টিকা পাঠাচ্ছে না সিরাম।

সিরামের টিকার পাশাপাশি ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত ‘কোভ্যাক্সিন’ কো-প্রডাকশনের জন্য বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবির সঙ্গে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি গত ডিসেম্বরে চুক্তি করে।

চুক্তি অনুযায়ী, কোভ্যাক্সিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে জন্য যুক্ত হওয়ার কথা বাংলাদেশের। দিল্লির চিঠিতে ওই চুক্তিটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, বিষয়টি এখনও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দেয়নি।

কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কোভিশিল্ড থেকে বেশি বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

এ বিভাগের আরো খবর