দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী গণটিকা কার্যক্রমে প্রথম ডোজ প্রয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা কার্যকর হবে সোমবার থেকে।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর পরিচালক শামসুল হকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৬ এপ্রিল (সোমবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমের প্রথম ডোজ বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রসমূহকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার মজুত ফুরিয়ে আসছে। যে পরিমাণ টিকা আছে তাতে চাহিদা মেটানো যাবে বড়জোর দুই সপ্তাহ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিউজবাংলাকে আগেই জানিয়েছিলেন, নতুন টিকা না এলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে সরকার।
এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধী পাঁচটি ব্র্যান্ডের টিকার প্রয়োগ চলছে বিশ্বজুড়ে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোভ্যাক।
বাংলাদেশে চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ, যা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ সরকার, যা ধাপে ধাপে দেশে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু দুই ধাপে কেনা টিকার ৭০ লাখ ডোজ টিকা আসলেও বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা। কেননা ভারতেই অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদা মেটাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম।
বাংলাদেশি ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোকে সঙ্গে নিয়ে গত ৫ নভেম্বর সিরামের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
চুক্তি অনুসারে প্রতিমাসে বাংলাদেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর কথা সিরামের। এভাবে ছয়মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা।
জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসলেও ফ্রেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। এরমধ্যে অবশ্য ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারের হাতে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা।
ফেব্রুয়ারির পর মার্চ গেল এপ্রিলও শেষের পথে। কিন্তু কোনো টিকা পাঠাচ্ছে না সিরাম। ভারতের অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদাও ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কোভ্যাক্স প্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনা মূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার কথা। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে সেখান থেকে টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকেও আসছে না।
তবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের দেশে ২১ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছানোর কথা বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ২১ লাখ টিকা আসছে। ১ লাখ কোভ্যাক্স দেবে। আর ২০ লাখ দেবে সিরাম ইনস্টিটিউট।’