ভারতে প্রতি সেকেন্ডে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য সরকারগুলো। এর ওপর অনেকে দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত চিকেন পক্স, হামসহ যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাতে দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় থাকে না বললেই চলে। তবে সম্প্রতি এমন রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যারা দ্বিতীয়বার করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। কেন এমনটা হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভারতের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বলেন, কোভিড-১৯ আসলে ফ্লু জাতীয় ভাইরাস। জ্বর, সর্দি যেমন একাধিকবার হয়, করোনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক একই রকম। অত্যন্ত সংক্রামক এ ভাইরাসটির ধরনের পরিবর্তনের কারণে অনেকেই দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন ভাইরাসকে আটকে দেয়ার চেষ্টা করছি, তেমনি ডারউইনের “সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট” তত্ত্ব মেনে ভাইরাসও নিজে বাঁচার তাগিদে নিজেকে বদলে ফেলে। এ কারণে করোনামুক্ত হওয়ার পরও নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে।’
ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরন নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন দেবকিশোর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ভাইরাস রূপ বদলে কীভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে এখনও কোনো বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা প্রকাশ হয়নি।
‘ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য বা দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার ধরন সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ থাকলেও আমাদের দেশের নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিস্তর গবেষণার দরকার। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, গতবারের চেয়ে এবারের করোনার ধরন অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং শিশু ও কম বয়সীরা এবার অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’
ভাইরাস যতবার রূপ বদলাবে, তার বিরুদ্ধে লড়াই তত দীর্ঘ হবে বলে মনে করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়েছেন। বিশেষ করে যারা মনে করছেন, একবার সংক্রমণ হয়েছে বলে তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাদের মধ্যে দ্বিতীয়বার সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টিকা নেয়ার পরও সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তা হলে ভাইরাস আটকানোর কি কোনো উপায় নেই আনন্দবাজারের এ প্রশ্নের জবাবে সুকুমার বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের সংক্রমণ আটকানো না গেলেও বিশেষ উপসর্গ থাকছে না।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া উৎপাদিত ‘কোভিশিল্ড’ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার .০৩ শতাংশ। সংক্রমণের ক্ষতিকর দিক এড়াতে মাস্ক পরা ও টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত।