দেশে করোনাভাইরাসের টিকার সংকটের মধ্যে আশ্বাসের খবর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে পৌঁছাবে আরও ২১ লাখ ডোজ টিকা।
রোববার টিকার সার্বিক বিষয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ২১ লাখ টিকা আসছে। ১ লাখ কোভ্যাক্স দেবে। আর ২০ লাখ দেবে সিরাম ইনস্টিটিউট।’
বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনা টিকা বণ্টনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কোভ্যাক্স ফ্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশে কোভ্যাক্স ভারতের সিরাম থেকেই টিকা পাঠানোর কথা থাকলেও পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের টিকা, যা সংরক্ষণে জটিলতা রয়েছে।
২১ লাখ টিকায় গণটিকাদানের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে বলে জানান খুরশীদ আলম।
টিকার চাহিদা মেটাতে চীনের উদ্ভাবিত সিনোভ্যাক টিকাও নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা প্রয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি।’
দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার মজুত ফুরিয়ে আসছে। যে পরিমাণ টিকা আছে তাতে চাহিদা মেটানো যাবে বড়জোর দুই সপ্তাহ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিউজবাংলাকে আগেই জানিয়েছিলেন, নতুন টিকা না এলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে সরকার।
এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধী পাঁচটি ব্র্যান্ডের টিকার প্রয়োগ চলছে বিশ্বজুড়ে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোভ্যাক।
বাংলাদেশে চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ, যা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ সরকার, যা ধাপে ধাপে দেশে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু দুই ধাপে কেনা টিকার ৭০ লাখ ডোজ টিকা আসলেও বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা। কেননা ভারতেই অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদা মেটাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম।
বাংলাদেশি ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোকে সঙ্গে নিয়ে গত ৫ নভেম্বর সিরামের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
চুক্তি অনুসারে প্রতিমাসে বাংলাদেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর কথা সিরামের। এভাবে ছয়মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা।
জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসলেও ফ্রেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। এরমধ্যে অবশ্য ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারের হাতে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা।
মার্চ গেল এপ্রিলও শেষের পথে। কিন্তু কোনো টিকা পাঠাচ্ছে না সিরাম। ভারতের অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদাও ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কোভ্যাক্স প্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনা মূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার কথা। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে সেখান থেকে টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকেও আসছে না।
শুরুতে কোভ্যাক্স থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশকে দেয়া হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের উদ্ভাবিত টিকা। সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অনেকটা দুঃসাধ্য জেনেও এই টিকা নিতে আগ্রহ দেখায় সরকার।