দয়া নয়, ভারতের কাছে বাংলাদেশ অগ্রিম টাকা দিয়ে কেনা টিকা চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পাপন বলেন, ‘৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা পাওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দেয়া হয়েছে। সেই টাকায় কিনা আমরা ৭০ লাখ টিকা পেয়েছি। বাকি টিকা সময়মতো দ্রুত দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
টিকা নিতে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে যান পাপন। টিকা নেয়ার পর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পাপন বলেন, ‘চুক্তি ছিল টিকা নিতে অগ্রিম টাকা দিতে হবে। সরকার সেটা করেছে। সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে আমাদের কোম্পানি। তাদের ওখানে কী অনুমোদন দেয়া লাগবে, কী না লাগবে এটা আমাদের সমস্যা নয়। সঠিক সময় টিকা না দিলে সরকার অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।
‘তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারা বলে আসছে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু। এটা দেখার সময় আসছে এখন। এই ব্যাপারটা অবশ্যই আমাদের দেখতে হবে। এত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার দরকার নেই। তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো দয়া চাচ্ছি না; টাকায় কেনা টিকা চাচ্ছি।’
টিকার সংকট কেটে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে পাপন বলেন, ‘আগামী দুই মাস পর টিকার সংকট থাকবে না; প্রচুর টিকা চলে আসবে। দুই মাস পর আমাদের কাছে আরও অনেক অপশন চলে আসবে।
‘টিকার সংকট জুন পর্যন্ত থাকবে। এরপর আর কোনো সংকট থাকবে না।’
‘টিকা দিতেই হবে’
সিরামের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বেক্সিমকোর এমডি বলেন, ‘তিন কোটি টিকার চুক্তি হলেও দেড় কোটি টিকার টাকা আমরা দিয়ে দিয়েছি। এই টিকা মে মাসের মধ্যে দেয়ার কথা ছিল। সেখানে আমরা পেয়েছি মাত্র ৭০ লাখ। বাকি টিকা আমাদের দিয়ে দিক। তারপর হয়তো ওদের দিকে তাকিয়ে থাকব না।
‘আমরা বারবার বলছি, যেটার জন্য টাকা দিয়েছে সরকার, এই টিকা আটকানোর কোনো অধিকার তাদের নেই। যত সংকটই দেখাক না কেন…অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মিলালে হবে না। এমনকি ভারতও সিরামকে অগ্রিম টাকা দেয়নি। সিরামকে বিশ্বাস করে অগ্রিম টাকা দিয়েছে। কাজেই আমাদের টিকা দিতেই হবে।’
পাপন বলেন, ‘টাকা নিয়ে টিকা দেবে না এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নেই। টিকা না পেলে আমাদের দ্বিতীয় ডোজের সংকট দেখা দিবে…সরকারের কাছে সিরাম লিখিতভাবে জানিয়েছে ভারত সরকার টিকা আটকিয়ে রেখেছে। কাজেই আমি মনে করে এরপরেও আমাদের সরকারের চুপ করে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
‘সরকারের দ্রুত বলা উচিত, এটা আমাদের টাকা দিয়ে কেনা টিকা; অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনেছি। এটা আমাকে দিতেই হবে। অতএব আমি মনে করি আনঅফিসিয়ালি বা একটু ফোনে কথা বলে নয়। আমার মনে হয় একটা শক্ত পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে।’
‘টিকা না বানিয়ে উপায় নেই’
রাশিয়ার ফর্মুলার টিকা বাংলাদেশে তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে পাপন বলেন, বিশ্বে এখন অনুমোদন পাওয়া চারটি টিকা রয়েছে। ফাইজার, মর্ডানা, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন।
‘এগুলো ছাড়া অনুমোদনের আগে রাশিয়ার টিকা উৎপাদন করে লাভ নেই। আপনার কী বলতে চাচ্ছেন যেটা এখনও অনুমোদন পায় নাই এমন টিকা আমাদের দেশে উৎপাদন করব?’
২১ জানুয়ারি ভারত থেকে প্রথম উপহারের টিকা আসে। ছবি: নিউজবাংলা
রাশিয়ার টিকার অনুমোদন নিয়ে পাপন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এদের কোনো একটাতে অনুমোদন পাইতে হবে। যদি এদের কোনো একটিতেও অনুমোদন না হয়ে থাকে তাহলে কেন এটা আমার বানাব? এটা সরকার অনুমোদনও দেবে না। সো আমি বলতে পাচ্ছি, যেকোনো মূল্যে অনুমোদনে পাইলে অবশ্যই আমরা সেটি বানাবো।
‘তবে হ্যাঁ আমি বলতে পারি, আমাদের পরিকল্পনা ছিল সরকারকে টিকা আনতে সহযোগিতা করব। তবে এখন যে অবস্থা, টিকা না বানিয়ে কোনো উপায় নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা উৎপাদনে যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা কেন এটা বানাচ্ছে না? তারা কেন এগিয়ে আসলো না। কিন্তু একটা জিনিস আমরা বলতে পারি, আমার মানে বেক্সিমকো এ বছরের মধ্যে টিকা উৎপাদনে যেতে পারে। তবে এটা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে সরকার যে চুক্তি করেছে, তার অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মা। চুক্তি অনুযায়ী তারাই টিকা নিয়ে আসবে দেশে। পরিবহনের পাশাপাশি দেশে সংরক্ষণের দায়িত্বও তাদের। অর্থও পরিশোধ করবে প্রতিষ্ঠানটি। পরে সরকার বেক্সিমকোকে দেবে টাকা।
সিরাম থেকে তিন কোটি টিকা আনতে গত বছরের ৫ নভেম্বর হয় সমঝোতা স্মারক। পরে ১৩ ডিসেম্বর হয় ক্রয়চুক্তি।
চুক্তির আওতায় দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে। ভারত সরকারের দুই দফা উপহারের ৩২ লাখ ডোজ মিলে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় দেশটি থেকে করোনাভারাসের টিকার নতুন চালান আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভারত নিজেই ভ্যাকসিন সংকটে আছে। তবে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে, শিগগিরই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি করা হবে।’
ভারতে চার দিন ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময় বৃহস্পতিবার আখাউড়া স্থলবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
দোরাইস্বামী বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দুই দেশ খারাপ সময় পার করছে। এর মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত আছে। টিকার জন্য দুই দেশের সম্পর্কে ভাটা পড়বে না।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ কারণে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশি টিকা সরবরাহের চুক্তি আছে। চুক্তি অনুযায়ী ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি টিকা ক্রমান্বয়ে সরবরাহ করা হবে।