বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইসিইউ আছে, ডাক্তার নেই, রুমে তালা

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:১২

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা সদর হাসপাতালে দুই শয্যার আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করেন বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। কিন্তু এই ইউনিট পরিচালনা করার জন্য যে দক্ষ লোকবল থাকা দরকার, সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে ইউনিটের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থাতেই পড়ে থাকে। 

মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের জেলা মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে সাত বছর আগে চালু হওয়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউয়ের কোনো সুবিধা পাচ্ছে না রোগীরা। কারণ, সেখানে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নেই, নেই বিশেষায়িত নার্স বা টেকনিশিয়ান।

অব্যবহৃত ইউনিটগুলো পড়ে থেকে যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সেগুলো রাখার জন্য আলাদা কক্ষও বরাদ্দ দিতে হয়েছে। স্থান সংকুলানে ভুগতে থাকা হাসপাতালের জন্য এটিও একটি সমস্যা।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দাবি করেছেন, জটিল রোগী থাকে না বলে তাদের আইসিইউয়ের দরকারও পড়ে না। তবে সিভিল সার্জন আরও জানালেন, তারা ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালু করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

দুই ইউনিটের আইসিইউ যেখানে চালানো যাচ্ছে না, সেখানে ১০ শয্যার ইউনিট কেন চাওয়া হয়েছে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, দুই শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালাতে প্রতি শিফটে একজন করে অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক, দুইজন সিনিয়র নার্স ও দুইজন সাপোর্টিং নার্স থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১২ জন দক্ষ জনবল থাকতে হবে।

অর্থাৎ ১০ শয্যা হলে লোকবল আরও বেশি লাগবে। কিন্তু দুই শয্যার জন্যই যেখানে লোকবল পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে ১০ শয্যার লোকবল কীভাবে পাওয়ার আশা করছেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব নেই।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা সদর হাসপাতালে দুই শয্যার আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করেন বর্তমানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। কিন্তু এই ইউনিট পরিচালনা করার জন্য যে দক্ষ লোকবল থাকা দরকার, সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে ইউনিটের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থানেই পড়ে থাকে।

গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে মে মাসে আইসিইউ স্বল্পতার বিষয়টি সামনে আসার পর দরজা খোলা হয়। নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু সরঞ্জাম পাল্টে নতুন সরঞ্জামও সংযোজন করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা হয়নি একজন রোগীরও। আবার সেই ইউনিটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে তালা।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘উদ্বোধনের পর জনবলের অভাবের কারণে এখন পর্যন্ত আইসিইউয়ের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। পরে গত বছরের মে মাসে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে পুনরায় আইসিইউটি ঠিক করা হয়।

‘তা ছাড়া সদর হাসপাতালে তেমন কোনো মুমূর্ষু রোগী আসে না। যেসব রোগী আসে, তাদের সাধারণ বেডে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর যদি অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয় তাহলে ঢাকায় পাঠানো হয়।’

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘দক্ষ জনবলসহ দুই বেড থেকে ১০ শয্যার ইউনিট করতে মন্ত্রণালয়ের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। জনবল দিলে আইসিইউ চালাতে আর কোনো সমস্যা হবেনা।’

তিনি বলেন, ‘একটি আইসিইউর গুরুত্বপূর্ণ হলো বেড, ভেন্টিলেটর ও পেশেন্ট মনিটরিং। এসব পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। না হলে এগুলো সঠিকভাবে কেউ পরিচালনা করতে পারবে না।‘

এই ইউনিটের মাধ্যমে কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জটিল রোগীরও এটির দরকার হয়।

করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকের শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিল সমস্যা দেখা দেয়। আইসিইউয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলে অনেকের ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়।

মানিকগঞ্জ শহরের সচেতন নাগরিক খন্দকার খালেক বলেন, ‘আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করাতে প্রচুর টাকা প্রয়োজন হয়। সরকারি হাসপাতালে এটি থাকলে মানুষ তুলনামূলক কম খরচে সুবিধা পাবে, মানুষের জীবন বাঁচবে। তাই সকলের কথা চিন্তা করে আইসিইউর কার্যক্রম দ্রুত চালু করা দরকার।’

আইনজীবী দীপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘বিশেষ করে এই করোনার সময় আইসিইউ চালু থাকা সবচেয়ে বেশি দরকার। এখানে যেহেতু এই ইউনিট আছে, তাই সরকারের কাছে জোর দাবি জানাব, দ্রুত লোকবল দেয়া হোক।’

এ বিভাগের আরো খবর