করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অতি জরুরি অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। সঠিক সময়ে অক্সিজেনের জোগান নিশ্চিত করতে না পারায় অনেককে মেনে নিতে হয়েছে মৃত্যুর শীতল স্পর্শ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে দৈনিক অক্সিজেন চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১৮০ মেট্রিক টন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিনডে ১১০ মেট্রিক টন এবং স্পেকট্রা ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন করে।’
তারপরেও প্রায় ২০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমন বাস্তবতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে অক্সিজেন উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করতে চান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকা প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব প্ল্যান্ট প্রতিটি ডিভিশনে বসানোর চেষ্টা করা হবে।’
এই পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে চলছে ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন। ২৮ এপ্রিল মধ্য রাতে শেষ হচ্ছে চলমান এই লকডাউন। দেশের অর্থনীতি, জীবন-জীবিকার কথা ভেবে লকডাউন না বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে চান সরকার। আর তাতে সংক্রমণ অনেকটা কমে আসবে বলেও আশা করছে সরকার।
কোভিড–১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ জানান, চলমান লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই তারা আবার বৈঠকে বসবেন। ওই সভার আলোকে তারা তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করবেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘লকডাউন যদি আর বাড়ানো না হয়, তাহলে এর একটা ভালো পরিকল্পনা দরকার। অর্থাৎ ধাপে ধাপে আমরা কীভাবে লকডাউন শিথিল করে সেই জায়গাটায় বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
এই পরামর্শক বলেন, ‘লকডাউনের পর দুই বা তিন সপ্তাহের মাথায় মূল চিত্র ফুটে ওঠে। সেই বিবেচনায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশ্যই আমরা আশা করছি এবং যেটা বিজ্ঞানসম্মত সেটা হলো (সংক্রমণের) হার অনেক কমে যাবে।’
তবে রোগী বাড়লে অক্সিজেন সংকট সামাল দেয়া নিয়ে চিন্তিত সরকারও। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেশের অক্সিজেনের চাহিদা এবং সরবরাহ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, লিনডে ও স্পেকট্রা- এই দুই কোম্পানির মাধ্যমে সারাদেশে ১৬০ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে গেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আর যেহেতু কোভিড রোগী অনেক বেড়ে গেছে, ১০ গুণ বেড়ে গেছে, স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেনের চাহিদা ১০ গুণ বেড়ে গেছে।’
দেশে এখন হাজারেরও বেশি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই পরিমাণ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যদি সারা দেশে চলে, তাহলে অক্সিজেনের পরিমাণও কত বাড়ছে! আমাদের দেশে যে কটা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা হান্ড্রেড পারসেন্ট ক্যাপাসিটিতে চলছে। তারপরও কুল পাচ্ছে না।’
রাজধানীর কলাবাগানে করোনা রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ছবি: নিউজবাংলা
সংকট মোকাবিলায় জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করছে, তাদের আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে বলেও জানান জাহিদ মালেক। বলেন, ‘আমরা তাদের অ্যালাউ করেছি ইন্ডিয়া থেকে কিছু ইমপোর্ট করার জন্য। সেই ইমপোর্ট কাজও চলছে। কাজেই ওইভাবেই আমরা অক্সিজেনটা মিটআপ করছি।’
দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সিংহভাগ যোগান দিয়ে আসছে লিন্ডে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে ভুগতে থাকা মানুষদের সেবায় ‘নোয়াখালী পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক’চালু হয়। ছবি: নিউজবাংলা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘লিন্ডের নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে দুটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে দিনে ৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন করা হয়। তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। দ্রুত অনুমোদন কাজ চলছে।’
এই অক্সিজেন প্ল্যান্টের অনুমোদনের পর তারা দ্রুত উৎপাদনে গেলে আপাতত অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা।