জনবল সংকটের কারণে একসঙ্গে সব আইসিইউ চালাতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল। এ কারণে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে অন্য হাসপাতালে।
হাসপাতালটি উদ্বোধনের ৫ দিনের মধ্যে ১০০ আইসিইউ চালু করা হয়। এরই মধ্যে ৯৮টি আইসিইউতে রোগী রয়েছে।
জনবল সংকটের কারণে বাকি আইসিইউগুলো এই মুহূর্তে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন।শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মাত্র ৫ দিন হলো আমাদের হাসপাতাল চালু হয়েছে। এখানে এরই মধ্যে ১০০টি আইসিইউ প্রস্তুত করা হয়েছে। ৯৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
‘২০০ বেডের আইসিইউ রেডি রয়েছে। তবে এসব বেড চালু করার জন্য অনেক জনবল প্রয়োজন। তা আমাদের কাছে নেই। জনবল নিয়োগের পরে বাকিগুলো চালু করতে হবে। এ জন্য কিছুদিন সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে গুরুতর রোগী এখানে আসছে। যাদের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। সবাইকে আইসিইউ সমমানের বেডে রাখা হচ্ছে। আমাদের সাধারণ বেডে কোনো রোগী নিতে পারিনি।
‘গত ৫ দিনে হাসপাতালে ১৭৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এখানে সিরিয়াস রোগী ভর্তি করছি।’
এ মাসেই সম্পূর্ণ ১ হাজার বেডে হাসপাতাল চালু করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের এখানে যে ক্যাপাসিটি রয়েছে তা এ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করব। তবে এক হাজার মানুষের সেবা দেয়ার জন্য কী ধরনের জনবল প্রয়োজন হবে, তা আপনাদের সবার ধারণ রয়েছে।
‘কুর্মিটোলায় যান; ওখানে দেখেন কতজন মানুষ কাজ করছে। আমি কতজন নিয়ে কাজ শুরু করেছি এটা আপনাদের দেখতে হবে।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালসহ ঢাকার বাইরে থেকে অনেক রোগী আসছেন। তবে আমরা বাইরের জেলা থেকে আসা রোগীদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
‘যারা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ট্রান্সফার হয়ে আসছেন, তাদের নিরুৎসাহিত করছি।’
রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি মার্কেটে দেশের বৃহত্তম করোনা হাসপাতাল চালু হয় ১৮ এপ্রিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের দিন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, হাসপাতালটিতে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বেড রয়েছে ২১২টি।
১ লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটি দীর্ঘদিন ফাঁকা ছিল। গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে জুনের মাঝামাঝি সময়ে আইসোলেশন সেন্টার এবং বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়।
নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘এটাকে দেশের সবচেয়ে বড় কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে পরিপূর্ণ ১০০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও প্রায় সমমানের এইচডিইউ (হাইডিপেনডেনসি ইউনিট) বেড থাকছে ১১২টি। এ ছাড়া সাধারণ শয্যা থাকছে প্রায় এক হাজার।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় হাসপাতালটি সেনাবাহিনীর পরিচালনায় থাকবে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘হাসপাতালটিতে যন্ত্রপাতি, জনবলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জমি, ভবন, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করছে ডিএনসিসি। অবকাঠামোগত প্রস্তুতির কাজ বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
‘হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে সেনাবাহিনী। হাসপাতাল হিসেবে এখন শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। পরে জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হবে।’
হাসপাতাল পরিচালনায় ৪০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স ও ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মী চাওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন নাসির উদ্দিন।