বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেট বিভাগে আইসিইউর তীব্র সংকট

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২১ ১৫:৩৩

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘গত বছর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছিল। রোগী কমে যাওয়ায় এর কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে আসে। এখন আবার আইসোলেশন সেন্টার ঢেলে সাজানো হচ্ছে।’

করোনার উপসর্গ থাকা বাবাকে নিয়ে সোমবার সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে এসেছিলেন দক্ষিণ সুরমার শরিফ উদ্দিন। তবে বাবাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেননি তিনি।

শরিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবার শ্বাসকষ্ট বেশি ছিল। চিকিৎসকরা বলেছেন তার আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সেখানে আইসিইউ খালি নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি।’

সিলেট বিভাগে করোনা চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র এই শামসুদ্দিন হাসপাতাল। গত ১৫ দিন ধরে এই হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। আইসিইউ শয্যা খালি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।

সিলেট বিভাগে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই শতাধিক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এদের অনেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সর্বসাকুল্যে ১০০টি আসন থাকায় বেশির ভাগ রোগী এই হাসপাতালে ভর্তিই হতে পারছেন না।

হাসপাতালে আসনের চেয়েও বড় সংকট নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ)। করোনা রোগীদের জন্য পুরো সিলেট বিভাগে বরাদ্দ আইসিইউ রয়েছে মাত্র ২১টি। এর মধ্যে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১৬টি ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে ৫টি। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনব্যবস্থাও। শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড থাকলেও দুটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

বিভাগের মধ্যে করোনা চিকিৎসার একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল হওয়ায় পুরো বিভাগের করোনা আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গ থাকা রোগীরা শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসায় আসেন। কিন্তু মাত্র ১৪টি আইসিইউ বেডের কারণে প্রতিদিনই অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অনেকে চেয়েও আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন না। এদের মধ্যে সামর্থবানরা যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। বাকীরা পড়ছেন বিপাকে। এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ছাড়াও নগরের উপকণ্ঠের খাদিম এলাকার শাহপরাণ হাসপাতাল ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রোগীদের অভিযোগ এই দুই হাসপাতালে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সেবিকা। চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও নেই এখানে। ফলে রোগীরা এসব হাসপাতালে ভর্তি হতে অনাগ্রহী।

শামসদ্দিন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ১৪ টি আইসিইউ বেডের মধ্যে সবগুলোই রোগীতে পূর্ণ। কোনো শয্যা খালি নেই।

সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা কায়সার আহমদ অভিযোগ করেন, তিনি তিনদিন আগে তার চাচাকে মূমুর্ষ অবস্থায় শামসুদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। তার আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ খালি নেই বলে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে।

হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকার কথা স্বীকার করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মহাপাত্র।

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। আইসিইউ ছাড়া সাধারণ শয্যাও খালি থাকছে না। কোন রোগী মোটামুটি সুস্থ হলেই আমরা তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর সংকট থাকার কারণে করোনা নিশ্চিত না হলে কোনো রোগীকেই আইসিইউতে ভর্তি করা হচ্ছে না। অনেক সময় আক্রান্তদেরও আইসিইউ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ছাড়াও শাহপরাণ হাসপাতাল ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। তবে এসব হাসপাতালে ভর্তি হতে রোগীদের আগ্রহ কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছিল। রোগী কমে যাওয়ায় এর কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসে। এখন আবার আইসোলেশন সেন্টার ঢেলে সাজানো হচ্ছে।’

এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুরে আলম শামীম। তিনি বলেন, ‘আইসিইউ-সুবিধা বাড়াতে আমরা ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তবে আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেনে জোর দিচ্ছি। কারণ অক্সিজেনের মাধ্যমে সাধারণ শয্যায়ই অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।’

সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সিলেটের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। তবে এই দুটি হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ শয্যাও খালি থাকছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, আরেকটি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব বেসরকারি হাসপাতালের করোনার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যা স্বল্প আয়ের মানুষদের নাগালের বাইরে।

নগরীর আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে আটটি আইসিইউ বেড। এর মধ্যে কোনো শয্যা খালি নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট রাশেদুল ইসলাম।

অপরদিকে, দক্ষিণ সুরমার নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ১০টি আইসিইউ বেড।

হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীও জানিয়েছেন তাদের হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই।

নগরের দরগাহ গেইট এলাকার নুরজাহান হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম আহমদ জানিয়েছেন, তারা করোনা রোগীদের জন্য ২৩ টি আইসিইউ শয্যা চালু করছেন।

এ বিভাগের আরো খবর