ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে গড়ে তোলা দেশের বৃহত্তম করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে। হাসপাতালটিতে ১৫ টাকার মধ্যে দেয়া হচ্ছে আইসিইউ সেবাও।
হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে রোববার উদ্বোধন করা হলেও রোগী ভর্তি শুরু হয় সোমবার থেকে। এদিন সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত প্রথম ছয় ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দুজনকে ভর্তি করানো হয় আইসিইউতে।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিতে আইসিইউ বেড আছে ১১২টি। এইচডিইউ বেড ২৫০টি। বর্তমানে দেশে করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ বেডের বেশি প্রয়োজন। এই সংকট নিরসনে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি জানান, এখানে করোনা আক্রান্ত সকল রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হবে বিনামূল্যে। আইসিইউ থেকে সবকিছু। এজন্য ১০ থেকে ১৫ টাকার একটি টিকিট কাটতে হবে।
‘আমাদের সকল সেবা বিনামূল্যে দেয়া হবে। চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার। তবে করোনা চিকিৎসার জন্য কিছু পরীক্ষা লাগে, এই পরীক্ষার জন্য কিছু টাকা নেয়া হবে। এটাও অনেক কম। করোনায় আক্রান্ত একটি মানুষও যাতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে নিয়ে আমাদের এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা।’
হাসপাতালটিতে ১৫ টাকার টিকিটে প্রয়োজনে আইসিইউ সেবাও পাবেন রোগীরা। ছবি: নিউজবাংলা
দেশের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতালটিতে রোগীদের মোট শয্যার সংখ্যা ১০০০টি। অর্ধেকের বেশি শয্যায় রোগীকে অক্সিজেন সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নত সব যন্ত্রপাতিসহ একটি আধুনিক হাসপাতালে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সবকিছুই এই হাসপাতালে রয়েছে।
হাসপাতালটিতে স্বল্প খরচে মিলছে করোনা রোগীর উন্নত সব চিকিৎসা। চিকিৎসার জন্য ১০ থেকে ১৫ টাকার টিকিটের আওতায় প্রয়োজনে দেয়া হচ্ছে আইসিইউ সেবাও।
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ছয়দিন মুগদা হাসপাতালের ভর্তি ছিলেন গুলশানের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী ওহিদা আক্তার। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে স্বজনেরা খোঁজ নিয়েও কোথাও আইসিইউ ফাঁকা পাননি।
অবশেষে এক চিকিৎসকের পরামর্শে আজ সকালে ডিএনসিসি হাসপাতালে ১৫ টাকা টিকিট কেটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ওহিদার বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক হাসপাতালে খোঁজ করে আইসিইউ না পেয়ে এক চিকিৎসকের পরামর্শে এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। মাত্র ১৫ টাকা টিকিট নিয়েছে। এখনও ওহিদা শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা দিয়েছে। সেগুলোও এখানে করাব।’
হাসপাতালটিতে আইসিইউ বেড থাকবে ২১২টি, এইচডিইউ বেড ২৫০টি, কোভিড আইসোলেটেড রুম ৪৩৮টি। ইমারজেন্সি বেড ৫০টি, যার ৩০টি পুরুষ ও ২০টি মহিলা রোগীর জন্য। এর পাশাপাশি এখানে আরটি পিসিআর ল্যাব, প্যাথলজি ল্যাব, রেডিও থেরাপি সেন্টার, এক্সরে সুবিধাসহ অন্যান্য নানাবিধ সুবিধা আছে।
এখন পর্যন্ত চালু করতে পারা বেড সংখ্যা ২৬০টি; এর মধ্যে আইসিইউ বেড রয়েছে ৬০টি, ইমার্জেন্সি ৫০টি, জেনারেল ওয়ার্ড ১৫০টি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় হাসপাতালটি সেনাবাহিনীর পরিচালনায় থাকবে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালটিতে যন্ত্রপাতি, জনবলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জমি, ভবন, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করছে ডিএনসিসি। অবকাঠামোগত প্রস্তুতির কাজ বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
‘হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে সেনাবাহিনী। হাসপাতাল হিসেবে এখন শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। পরে জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হবে।’
হাসপাতাল পরিচালনায় ৪০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স ও ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মী চাওয়া হয়েছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘১৫০ চিকিৎসক, ২০০ নার্স ও ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেবা দানকারী সবাই আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্সের সদস্য। পরবর্তী সময়ে সাধারণ চিকিৎসকদেরও নিয়োগ দেয়া হবে।
১ লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটি দীর্ঘদিন ফাঁকা ছিল। গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে জুনের মাঝামাঝি সময়ে আইসোলেশন সেন্টার এবং বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। গতকাল থেকে এটি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে চালু হলো।