বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা: কাজে আসছে না সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ১৫:০২

সংক্রমক ব্যাধি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শহরের অন্য হাসপাতালকে। অথচ এই দুর্যোগে কাজে লাগছে না সিলেটের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল।

সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। প্রায় ১০ একরের বিশাল জায়গা নিয়ে নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এ হাসপাতাল।

এক বছরের বেশি সময় ধরে সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাসের প্রকোপ চললেও তার চিকিৎসায় হাসপাতালটি কোনো কাজেই লাগছে না। বরং দীর্ঘ অবহেলা আর নানা সংকটে প্রায় পরিত্যক্ত হাসপাতলটি।

সিলেটে সরকারি পর্যায়ে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় আরও দুটি সরকারি হাসপাতালকে আইসোলেশন সেন্টারে পরিণত করা হয়েছে।

এ ছাড়া ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ১৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। নগরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালও কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব হাসপাতালকে। অথচ সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল হলেও তা কাজে লাগছে না এই দুর্যোগে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল। তবে এখানে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার আনুসাঙ্গিক কোনো যন্ত্রপাতি না থাকা ও লোকবল সংকটে পরিকল্পনা থেকে সরে যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে ‘কলেরা হাসপাতাল’ নামে ১০ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০ শয্যার এই হাসপাতাল। পরে এটিকে ‘সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য তৎকালীন সময়ে শহরের বাইরে নির্জন স্থানে নির্মাণ করা হয় এই হাসপাতাল।

প্রথমে হাসপাতালটি সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসলেও বর্তমানে দ্বৈত প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ব্যহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও সিলেটের সিভিল সার্জনের মাধ্যমে এখন পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতালটি।

এদিকে ৫৮ বছর আগে ২০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ হাসপাতালটির শয্যার সংখ্যা না বাড়লেও কমেছে জায়গার পরিমাণ। প্রতিষ্ঠার সময় জায়গার পরিমাণ ১০ একর থাকলেও বর্তমানে মোট জায়গার পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র এক একর সাত শতকে।

বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে কমেছে জায়গার পরিমাণ।

এ ছাড়া হাসপাতালের চার শতক জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে সদর উপজেলা খেলার মাঠ। যা এখন শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। সংক্রামক হাসপাতালের চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।

গত বছরে হাসপাতালটিতে যুক্ত হয়েছ একটি অ্যাম্বুলেন্স। এই অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া এখানে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদানের তেমন কোনো যন্ত্রপাতিও নেই। এমনকি নেই কোনো এক্স-রে মেশিন। রয়েছে তীব্র জনবল সংকট।

হাসপাতালে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে পদের সংখ্যা ৪৫টি। তবে মঞ্জুরিকৃত পদের ৬৩ শতাংশই শূন্য রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে দুই চিকিৎসকসহ কর্মরত ১৭ জন।

এখানে একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র কনসালটেনন্ট, দুইজন মেডিক্যাল অফিসার ও একজন প্যাথলজিস্ট থাকার কথা। তার বদলে আছে কেবল মেডিক্যাল অফিসার পদে দুজন চিকিৎসক।

জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের চিকিৎসকের পদটিতে একজন কর্মরত থাকলেও তিনি গাইনি বিভাগের চিকিৎসক হওয়ায় বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন।

হাসপাতালটিতে তিনটি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের পদ খালি। খালি রয়েছে স্টুয়ার্ডের পদ। হাসপাতালে পাঁচটি সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ৫ জনই কর্মরত থাকলেও সহকারী স্টাফ নার্সের চারটি পদের তিনটিই খালি।

সংকট রয়েছে প্রশাসনিক পদেও। হাসপাতালটির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাত পদের ছয়টিই শূন্য। একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও ৬ জন অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) থাকার কথা থাকলেও শুধু একজন অফিস সহায়ক দিয়ে চালানো হচ্ছে গোটা হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম। সংকট আছে কর্মচারী পদেও।

হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে এখানে ডাইরিয়া, ধনুষ্টংকার, জলবসন্ত, জলাতঙ্ক, টিটেনাস, হাম, মামস-জাতীয় রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই।

সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার এহসানুন জামান খান বলেন, হাসপাতালটির প্রধান সমস্যা জনবল ঘাটতি। একটি কনসাল্টেন্টের পদ থাকলেও সেটি খালি রয়েছে। এ ছাড়া নেই রোগ নির্নয়ের পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা।

এদিকে হাসপাতালটিতে চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, হাসপাতালটিতে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশন প্রতিস্থাপন জরুরি হলেও এ ব্যাপারে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালটির উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘এখানে দ্বৈত প্রশাসন থাকায় জনবল থেকে শুরু করে কোন ব্যাপারে জোর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তারপরেও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও চালক নিয়োগ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সিভিল সার্জন থাকাকালীন এ ব্যাপারটা নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি; দুই-তিনবার চিঠি দিয়েছি।

‘বর্তমানে করোনাকালীন পরিস্থিতে এ হাসপাতালের প্রয়োজনীয় উন্নয়নে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব দ্রুতই এটি একক প্রশাসনের আওতায় চলে আসবে। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিলেটের সহকারী পরিচালক (সম্প্রতি সুনামগঞ্জে বদলি হয়েছেন) আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে আমরা এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আইসিইউ, ভ্যান্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও লোকবল না থাকায় এটি এখন ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর