করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরও এক সপ্তাহের ‘কঠোর’ লকডাউনের সুপারিশ করেছেন দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কারিগরি কমিটির বিশেষজ্ঞরা।
পরিস্থিতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির ৩১তম অনলাইন বৈঠকে এই সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরপর সোমবার সকালে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সই করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চলমান এক সপ্তাহের লকডাউন শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। ধীরে ধীরে লকডাউন শেষ করার পূর্বপরিকল্পনা তৈরি রাখারও পরামর্শ তাদের।
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়, যে বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন, যা চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। এই লকডাউন বাস্তবায়নে ১১ দফার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
সারা দেশে করোনার উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় কমিটি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন সুপারিশ করেছিল। সরকার ইতোমধ্যে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে। কমিটি এতে সন্তোষ প্রকাশ করে। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায় না।
এতে আরও বলা হয়, দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি কমিটি উপলব্ধি করে। তবে বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক খোলা রাখা, ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল, ইফতার বাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিড় লকডাউনের সাফল্যকে অনিশ্চিত করেছে।
কমিটির সভায় সামাজিক সমতার বিষয়েও নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, ফায়ার সার্ভিস ও অন্য জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। খোলা রাখা জরুরি সেবার তালিকাও প্রকাশ করার অনুরোধ করেছে কমিটি। অন্যথায় বিরূপ পরিস্থিতির আশংকা প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে চলমান লকডাউনে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিউটির জন্য চলাচলে বাধা ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কাঁচাবাজার উন্মুক্ত স্থানে স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে আরও এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছে কমিটি।
সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, পরবর্তী সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। ধীরে ধীরে লকডাউন শেষ করার পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল চালু হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয় বিবৃতিতে।
রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ থাকায় দ্রুত আরও সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেয়া, নমুনা পরীক্ষা সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে কমিটি ইতোমধ্যে সরকারি নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার পরামর্শ দিয়েছে।
পিসিআর টেস্ট কিটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার মূল্য পূণর্নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এতে করে যেমন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে, তেমনি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসবে ও সাশ্রয়ীমূল্যে পরীক্ষা করা যাবে। সরকারি ল্যাবরেটরিতে চাপ কিছুটা কমবে। এতে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতাল, ক্লিনিকে গর্ভবতী করোনা ও ননকরোনা মায়েদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেছে কিমিটি। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন ডিএনসিসি হাসপাতালে গর্ভবতী মায়েদের একটা কর্নারে বিশেষায়িত (আইসিইউ) ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কমিটির পরামর্শ, প্রতিটি হাসপাতাল তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী চেইন অফ রেফারেন্স সিস্টেম মেনে চলবে। সব মৃদু করোনা রোগীর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
সেই সঙ্গে কোয়ালিটি সেবা নিশ্চিত করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।