করোনায় মানসিক স্বাস্থ্যে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপে বলছে, দেশের অর্ধেক মানুষ এখন বিষন্ন।
প্রতিবেদন বলছে, দেশের প্রতি দুইজনের প্রায় একজন (৪৬ শতাংশ) বিষন্নতায় ভুগছে, যেটি ২০১৮ সালে ছিল ১৮.৭ শতাংশ। অর্থাৎ এই সংখ্যাটি আড়াইগুণ বাড়িয়েছে করোনাকাল।
একইভাবে প্রতি তিনজনের একজন এখন দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, যেটি ২০১৮ সালে করা আগের প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে ৪.৭ শতাংশ।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইইডিসিআর ওয়েবসাইটে শনিবার রাতে জরিপটি প্রকাশ করা হয়েছে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার কারণে জীবন ও জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়া, মৃত্যুর সংখ্যা এরই মধ্যে ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া, মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে।
রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার করোনার যে নতুন স্ট্রেইন আঘাত হেনেছে, সেখানে হঠাৎ করেই অক্সিজেন লেভেল কমে যায়। রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়। কিন্তু অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। আইসিইউ স্বল্পতাও আছে।
করোনায় কাজ হারিয়েছেন অনেকে
পাশাপাশি এক বছরের বেশি সময় ধরে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির হিসাবে এক কোটির বেশি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় ঢুকেছে যারা গত এক দশকে নিম্ন আয়ের শ্রেণি থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছে। অনেকের বেতন কমে গেছে। বেতনের সঙ্গে যে ভাতা পাওয়া যায় সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ঈদ বোনাসও পাওয়া যায়নি অনেক ক্ষেত্রেই।
এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয় আত্মহত্যার সংখ্যায়।
জরিপে দেখা যায়, করোনার এক বছরে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৪ হাজার, যা আগের বছর ছিল ১০ হাজারের মতো।
কোভিড নিয়ে কুসংস্কার, কোভিড ভীতিতে অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
গবেষকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের কারণে মানসিক সংকট বেড়েছে।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত সব পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে স্ট্রেস, বার্নআউট হচ্ছে যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমে আসছে। অনেকে নিজের ব্যবসা হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন। এ কারণে বিষন্নতা ও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসার বাইরে থাকছেন অনেকে।
ইনস্টিটিউটের আরেক অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, ‘কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আতঙ্ক মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।
‘মানসিক চাপ হ্রাস করতে হবে। ঘুমের চক্র স্বাভাবিক রাখতে হবে। নিজের পছন্দের বিষয় ও কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া পরিবারের সঙ্গে ঘরের মাঝেই এক সঙ্গে সময় কাটানো ও পছন্দের কাজ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কিছু সময় অবশ্যই শারীরিক ব্যয়াম করতে হবে। সর্বোপরি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও টিকে আছি, বেঁচে আছি এ জন্য সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’
অতিরিক্ত আতঙ্ক, অস্থিরতা, মানসিক চাপ, বিষন্নতা, ঘুমের ধরন পরিবর্তন ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শও দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অথবা আইইসিডিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করেও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যায় বলে জানান অধ্যাপক মেখলা সরকার।