বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুস্থ হতে দিচ্ছে না ‘নতুন করোনা’

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ১২:৩৭

করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন পর রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও নতুন ধরনের করোনার ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে না। রোগীর অনেক সময় লাগছে সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক ও স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব পড়ছে। মানসিকভাবে বিষণ্ন হয়ে পড়ছে। অনেকের প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে। নিউরোসাইক্রিয়াটিক সমস্যা, যেমন কারও কারও মধ্যে পাগলাটে আচরণের প্রবণতা কিংবা ব্রেন ইনফেকশনের মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে।’

করোনার নতুন ধরন আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে কেবল মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে তা-ই নয়, রোগীদের সুস্থ হতেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। ভাইরাস থেকে মুক্তি পেলেও শরীরে স্বাভাবিক শক্তি ফিরে আসছে আরও দেরিতে।

নতুন ধরনের করোনা মূলত ফুসফুসে দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে এবং রক্ত জমাট বাঁধছে। তাদের আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে দ্রুত, যেটি গত বছর দেখা যায়নি।

গত ১৫ দিনে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা এর আগে কখনও দেখেনি বিশেষজ্ঞরা। নতুন ধরনের করোনা আক্রান্তের ধরন পরিবর্তনের কারণে চিকিৎসাপদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের বহুজনের মধ্যে বেশির ভাগ উপসর্গগুলো দেখা যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। সিটি স্ক্যানে ফল ভালো এলেও দ্রুত অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে।

যারা আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়েছেন, তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেক সময় লাগছে।

বাংলাদেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে দুটি ধরন ধরা পড়েছে বেশি। গত ১৮ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে গবেষকেরা ৫৭টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ৪৬টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের উপস্থিতি পেয়েছেন, যা মোট শনাক্তের ৮১ শতাংশ।

গবেষণা কেন্দ্রটি জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ধরন ৭০ শতাংশের বেশি সংক্রমণশীল। এ কারণেই এবার করোনা গত বছরের চেয়ে বেশি হারে ছড়িয়ে পড়ছে।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে নতুন ধরনের করোনায় তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছে তবে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন পর রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও নতুন ধরনের করোনার ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে না।

‘রোগীর অনেক সময় লাগছে সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক ও স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব পড়ছে। মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। অনেকের প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে। নিউরোসাইক্রিয়াটিক সমস্যা, যেমন কারও কারও মধ্যে পাগলাটে আচরণের প্রবণতা কিংবা ব্রেন ইনফেকশনের মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘এক মাস আগেও আইসিইউতে রোগীর চাপ অনেক কম ছিল। গত ৯ মার্চ থেকে আমাদের হাসপাতালের সব আইসিইউ শয্যা পরিপূর্ণ ছিল। এর একটি মাত্র কারণে এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই আইসিইউ লাগছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে যেত। এখন করোনা আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। আগে ৬ থেকে ৭ দিন আইসিইউতে থাকলে রোগী সুস্থ হয়ে যেত। তাদের কেবিনে রাখা যেত, এখন এটা আর সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ধরনের করোনা মানুষকে অনেক বেশি ভোগাচ্ছে।’

নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করছে

করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীদের একটা বড় অংশের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ফুসফুসের সংক্রমণ। এদের মধ্যে কারও কারও হৃদরোগ, কিডনি বিকল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও ক্যানসারও ছিল। চিকিৎসকরা বলছেন, নতুন ধরনের করোনা ফুসফুসকে সংক্রমিত করছে বেশি।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আহমেদুল কবীর বলেন, ‘নতুন ধরনের করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটছে ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে। হঠাৎ করেই আক্রান্তদের তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকের অন্য জটিল রোগও ছিল। করোনায় প্রধানত ফুসফুস সংক্রমিত হয়। তারপরই এই ভাইরাস হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে।’

তিনি জানান, আগে করোনা রোগীকে এক সপ্তাহের বেশি আইসিইউতে রাখতে হতো না। তবে আগের চেয়ে এখন রোগীদের বেশি বেশি অক্সিজেন দেয়া লাগছে। রক্তের অণুচক্রিকার সঙ্গে হিমোগ্লোবিনও কমে যাচ্ছে, যদিও তাদের আগে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার মতো রোগ বা রেকর্ড ছিল না।

যেভাবে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আগে করোনা আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে উঠেছে। তবে এখন সেটা হচ্ছে না। এখন ফুসফুস খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অক্সিজেন লেভেলও আগের তুলনায় দ্রুত কমে যাচ্ছে।’

‘আগে রিকভারি হতে সময় লাগত ৫-৬ দিন। কিন্তু এখন যাদের রিকভারি হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রেও আরও বেশি সময় লাগছে।

‘আগের চেয়ে রোগীদের এখন বেশি অক্সিজেন লাগছে। অবস্থার অবনতি হলে কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা দেয়ার পরে আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হতো। কিন্তু খুবই কম সময় হাতে পাওয়া যাচ্ছে। ভাইরাসটির সংক্রমণের ধরনেরও পরিবর্তন হয়েছে।’

করণীয় কী

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হলে প্রথমে বাড়িতে চিকিৎসা নিতে হবে। অক্সিজেনের পরিমাপ মাপার জন্য বাড়িতে একটি অক্সিমিটার রেখে দিতে হবে। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে ৩০ মিনিট পর পর হাত ধুতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর