করোনাভাইরাস শনাক্তে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে ভারতে। দেশটিতে গত ৯ দিনের মধ্যে ৮ দিনই সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হয়েছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগের দিনের শনাক্ত ও মৃত্যুর হিসাব প্রকাশ করে শুক্রবার সকালে।
ওই হিসাব অনুযায়ী, এক দিনে আরও ১ হাজার ১৮৫ জনের মৃত্যুতে ভারতে করোনায় প্রাণহানি পৌনে দুই লাখের কাছাকাছি। দেশটিতে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষের দেহে।
চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে করোনা সংক্রমণে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ হয় ভারত।
দেশটিতে ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। টিকার ঘাটতি, পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, হাসপাতালে শয্যাসংকট মিলিয়ে মহামারি পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে করোনা ওয়ার্ডে একেকটি বিছানায় একসঙ্গে দুই জন করে রোগী থাকছেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে মেডিক্যাল অক্সিজেনের ব্যাপক ঘাটতির ফলে প্রাণহানি বাড়ছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি।
এক বছর আগে মহামারির শুরুতে করোনার বিস্তার রোধে জাতীয় পর্যায়ে লকডাউনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত সরকার। ফলে এমন পরিস্থিতিতেও নতুন করে লকডাউন এড়াতে মরিয়া প্রশাসন।
বিভিন্ন রাজ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে কড়াকড়ি
মহামারিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্রে গত সোমবার থেকে চলছে ১৫ দিনের কারফিউ। এতে বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে দলে দলে অন্য রাজ্যে চলে গেছেন ভাসমান শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী কারফিউ শুরু হয়েছে রাজধানী দিল্লিতেও। দৈনিক সংক্রমণে মুম্বাইকে ছাড়িয়েছে দিল্লি।
এ দিন তাজমহলসহ ভারতের দর্শনীয় অনেকগুলো স্থানে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে ছয় মাস বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বরে খুলে দেয়া হয়েছিল তাজমহল।
হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু-কিশোররাও
ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ভারতসহ সব দেশ। তবে ভারতে সম্প্রতি এ ভাইরাস নিয়ে শিশু-কিশোরদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের সূত্র উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫ বছরের কম বয়সী করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ ধরনের রোগীদের মধ্যে গুরুতর উপসর্গও অনেক বেশি।
মুম্বাইয়ের পিডি হিন্দুজা ন্যাশনাল হসপিটালের কনসালট্যান্ট ড. খুশরভ বাজান বলেন, ‘১২ বছর থেকে ১৫ বছর বয়সী অনেক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অথচ গত বছর এ বয়সের একজন করোনা আক্রান্ত শিশু রোগীও পাইনি আমরা।’
১৩৩ কোটি মানুষের দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন সাড়ে ১১ কোটি মানুষ। এর মধ্যেই টিকা সরবরাহে ঘাটতির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অস্থায়ী অনেক কেন্দ্র।
সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন
করোনা সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ভারতে চলছে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উৎসব উদযাপন।
সবচেয়ে বড় মেলাটি বসেছে উত্তরাঞ্চলের হরিদ্বারে। চলতি সপ্তাহে কুম্ভমেলা উপলক্ষে গঙ্গার তীরে ভিড় করেছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ছোট্ট শহর হরিদ্বারে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেও মেলা বন্ধ হয়নি।
কুম্ভমেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সিদ্ধার্থ চক্রপানি এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের ধর্মবিশ্বাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত বলেই সবাই গঙ্গায় এসে ডুব দিচ্ছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে মা গঙ্গাই আমাদের এই মহামারি থেকে বাঁচাবেন।’
ভিড় বাড়ছে শ্মশানে
ভারতের বিভিন্ন শহরে শ্মশান ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মরদেহের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বেঙ্গালুরুর একটি শ্মশানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি জানান, স্বজনের মরদেহ পোড়ানোর জন্য সাত থেকে আট ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে শত শত মানুষকে।