কঠোর লকডাউন শুরু বুধবার, তার আগে স্রোতের মতো রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, এমনকি ট্রাকেও গাদাগাদি ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি মানার যে বিধান, তা চোখে পড়ছে না কোথাও, এমনকি তদারকিও করছে না কেউ।
ঢাকা ছাড়তে মানুষের ঢল চাপ তৈরি করেছে আরিচা, মাওয়া ফেরিঘাটেও। যাত্রী ও যানবাহন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। নদী পাড়ি দিতে ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট, ট্রলার ও লঞ্চেও উঠছে মানুষ।
এই অবস্থায় ভয় পাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশংকা এই জনস্রোত করনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রাজধানী থেকে বয়ে নিয়ে যাবে তৃণমূলেও।
গত ৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব বাস, তবে তাতে রাজধানী ছাড়ার প্রবণতা থেমে নেই। শহরের বহির্মুখ পর্যন্ত সিটি বাস বা অন্যান্য বাহনে চড়ে যাচ্ছে মানুষ। এর পর লোকাল বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, অটোরিক্সায় ছুটছে বাড়ির পথে। অনেকে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই যাচ্ছেন গন্তব্যে। নদীপথে ট্রলারও ভরসা অনেকের।
কঠোর লকডাউন আরোপের ঘোষণার পর রোববার থেকেই ঢাকা ছাড়তে ঢল নামে মানুষের। পরিস্থিতির সবচেয়ে অবনতি হয় মঙ্গলবার।
যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, আমিনবাজার সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য মানুষের স্রোত। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই, বালাই নেই কোনো সামাজিক দূরত্বের।
কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় ঢাকা ছাড়তে মানুষের ঢল নেমেছেগত ৫ এপ্রিল থেকে ঢিলেঢালা লকডাউন শুরুর পর জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো, তবে গত কয়েক দিনে সেই চিত্র উধাও।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষকে জোর করে তো আটকানো যায় না। আমরা সচেতন করতে কাজ করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছি, কিন্তু কেউই কিছু মানছে না। আমাদের স্বল্প জনবলে এত মানুষকে ঠেকানো সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই সর্বাত্মক লকডাউনের আগে মানুষ তাদের বাড়িকে বেশি নিরাপদ মনে করছে। যে কারণে যে যেভাবে পারছে বাড়ি যাচ্ছে। আমরা গত বছর মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিলাম, তখন মানুষ বিভিন্ন লিংকরোড হয়ে বাড়ি গিয়েছে। এভাবে তো হয় না।’
বুধবার সর্ভাত্মক লকডাউন শুরুর পর তা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলে জানান মোজাম্মেল হক।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে গত তিন দিন তাদেরও তেমন সক্রিয় দেখা যায় নি। ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে কাজ করেছি। অন্যরা এ সপ্তাহে কাজ করছেন।’
তবে কে কোন এলাকায় দায়িত্বে আছেন তা তিনি জানাতে পারেননি।
অসংখ্য মানুষ ঢাকা ছাড়ায় চাপ পড়েছে মাওয়া ফেরিঘাটেজনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিজের ইচ্ছামতো লকডাউনের একটি সংজ্ঞা তৈরি করেছে সরকার। এর সঙ্গে সায়েন্টিফিক লকডাউনের কোনো মিল নেই৷’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে মানুষ এখন গ্রামে যাচ্ছে। সাধারণ ছুটি যদি না বাড়ে তাহলে তারা আবার রাজধানীতে ফিরবে। এর মানে হলো কয়েক লাখ মানুষ এই এক সপ্তাহে আসা-যাওয়া করবে। ফলে লকডাউনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে ঘরে আটকে রাখা, বিচ্ছন্ন রাখা, তা সফল হচ্ছে না। উল্টো মানুষের চলাচল আরও বেড়ে যাওয়ায় গ্রামেও করোনা ছাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে।’