করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য অতি জরুরি অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদাও বেড়েছে কয়েক গুণ। সেই সঙ্গে আগাম সতর্কতা হিসেবে অনেকে সিলিন্ডার মজুদ করায় বেড়েছে দাম।
সঠিক সময়ে অক্সিজেনের জোগান নিশ্চিত করতে না পারায় রোগী মৃত্যু ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই জানতে চান, প্রয়োজনীয় সময়ে কোথায় মিলবে অক্সিজেন সিলিন্ডার।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থের ব্যবসায় যুক্ত আছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিডেট, লিনডে গ্রুপ লিমিটেড, মেঘনা গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, গ্যাসের সিলিন্ডার অনেকটাই আমদানি নির্ভর। অক্সিজেন সিলিন্ডার সাধারণত আমদানি হয় চীন ও ভারত থেকে।
ইসলাম অক্সিজেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দীন আল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, হাতেগোনা কিছু কোম্পানি অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি করে সাধারণ চাহিদা মেটায়। তবে গত এক মাসে অক্সিজেনে চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
চাহিদা বাড়লেও কোম্পানি পর্যায়ে আগের চেয়ে দাম বাড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে।
দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি
অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে খুচরা পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে দাম। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক মাস আগেও ১৪ লিটারের একটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন তা বাজার ভেদে ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আনোয়ার হোসোন প্রায় দুই যুগ ধরে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবসায় জড়িত। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন অনেক মানুষ অক্সিজেন কিনে রেখে দিচ্ছে, যাদের আসলে অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই। এ কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে। এক মাস আগেও আমি দিনে ৩০টির মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করেছি, এখন প্রতিদিন অন্তত ১০০ মানুষ কিনতে আসছে।’
মিরপুরের বাসিন্দা আরিফ হোসেন তার করোনা আক্রান্ত বাবাকে বাড়িতেই রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫ দিন বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় আছেন। এ সময় করোনা আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। যে কারণে ভয় থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে এসেছি। তবে দাম অনেক বেশি, ১৪ লিটারের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম রেখেছে ২৬ হাজার টাকা।’
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার নয়
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহায়তা ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার না করতে বলছেন চিকিৎসকেরা। বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে রেখেছেন। কখন, কীভাবে, কতটুকু অক্সিজেন দিতে হবে, তা সঠিকভাবে না জানা থাকলে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অক্সিজেন অকারণ ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বিপদ আরও বাড়তে পারে।’
তিনি জানান, একজন সুস্থ–সবল মানুষের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণত ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। করোনা আক্রান্ত কোনো কোনো রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। তখন অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ‘রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দেখার জন্য পালস অক্সিমিটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রে যদি দেখা যায় অক্সিজেনের মাত্রা কম, তাহলে কাছের কোনো হাসপাতালে যেতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছুতেই নিজে নিজে অক্সিজেন নেয়া যাবে না। কারণ, একেক রোগীর ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা ও প্রয়োগপদ্ধতি একেক রকম হতে পারে।’
অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে
অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ভাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর এই খাতের পরিসর বেড়েছে।
চাহিদার ভিত্তিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছে ফেসবুক ও অনলাইনভিত্তিক অক্সিজেনসিলিন্ডারবিডি, অক্সিজেনবিডি, মেডিশপ ডটকম, লিনডে ডটকমডটবিডি, সিসমার্ক লিমিটেডসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানের দাবি, ঢাকা শহরের ভেতরে দুই ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেন সেবার ফুল প্যাকেজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এই প্যাকেজের মধ্যে আছে বিওসি লিনডে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন ট্রলি, ফ্লো মিটার ও মেডিক্যাল মাস্ক।
বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। ছবি: নিউজবাংলা
বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের কাছে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে অক্সিজেন ব্যাংক, করোনায় তারুণ্য, জয় বাংলা অক্সিজেন, সংযোগ, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
এক বছর আগে ছাত্রলীগের তিন নেতা জয়বাংলা অক্সিজেন সেবা চালু করেন। বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ শহরে চলছে এই সেবা৷তাদের ৯০টি সিলিন্ডার দিয়ে এ পর্যন্ত ছয় হাজার করোনা রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে।
করোনা মধ্যেই গত বছর যাত্রা করে সংযোগ নামে একটি সামজিক সংগঠন। বর্তমানে তারা ৯৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছে। অন্যদিকে, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ৩৮১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।