ভারত সরকারের ৩২ লাখের পর এবার চীন থেকে করোনাভাইরাসের পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চীন পাঠাচ্ছে তাদের রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকা।
নিউজবাংলাকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
বাংলাদেশ শুরু থেকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভ্যাক্স টিকার ওপর নির্ভর করে আসছে। তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনতে ভারতীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরামের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে।
তবে ভারত প্রথমে ২১ জানুয়ারি ২০ লাখ টিকা উপহার হিসেবে পাঠায়। আর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিয়ে আসেন আরও ১২ লাখ টিকা।
তবে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুত টিকা পাচ্ছে না সিরাম থেকে। কথা ছিল প্রতি মাসে তারা ৫০ লাখ করে টিকা পাঠাবে। তবে ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ পাঠানোর পর ২৩ ফেব্রুয়ারি আসে আরও ২০ লাখ। এরপর এখনও কোনো টিকা আসেনি।
এর মধ্যেই সরকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু হাতে পর্যাপ্ত টিকা নেই। ফলে সিরাম টিকা না পাঠালে প্রথম ডোজ তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে দেয়া যাবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
ভারতের উপহারের ৩২ লাখ মিলে সরকারের হাতে টিকা আছে ১ কোটি ২ লাখ। এ পর্যন্ত ৬০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য ৪২ লাখ টিকা আছে।
এর মধ্যে সরকার টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
এই দুটি দেশ করোনার টিকা উৎপাদনের ঘোষণা অক্সফোর্ডের আগেই দিয়েছে। তবে তাদের টিকা খুব বেশি দেশ নিচ্ছে না।
ভারত দুই দফায় বাংলাদেশকে মোট ৩২ লাখ টিকা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে
তবে চীনের টিকাদেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের দেয়ার জন্য অনুমোদন দিয়েছে দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিরাম থেকে কেনা টিকা আসছে দেরি হওয়া বিকল্প উৎস থেকে টিকা নিশ্চিতে বিভিন্ন উৎস থেতে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে সিনোফার্ম টিকা উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে।’
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিলেও এখান পর্যন্ত সিনোফার্ম জাতিসংঘের এই সংস্থাটি থেকে তাদের টিকা অনুমোদন পায়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ‘শুধু চীন রাশিয়া নয় যে কোনো দেশই টিকা দিতে চাইলে সরকার নেবে, যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষা উৎপাদন করছে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যে টিকা নিরাপদ, এটা নিশ্চিত হয়েই টিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে।’
চলমান দান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সরকার গত ১৫ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে চীন সরকারকে টিকার জন্য অনুরোধ জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
সিরামের টিকা রপ্তানিতে ভারতের বাধা
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত নিজস্ব চাহিদার কথা বিবেচনা করে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার রপ্তানি গত ২৪ মার্চ স্থগিত করে। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত টিকা রপ্তানি বিলম্বিত হতে পারে।
কোভ্যাক্সের আওতায় ১৮০টি দেশও সিরাম উৎপাদিত টিকা পাবে। কিন্তু রপ্তানি স্থগিত হওয়ায় এসব দেশও টিকা পাচ্ছে না।