করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরিতে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রোববার রিপোর্টটি পজিটিভ আসে। রিপোর্টে সংযুক্ত কিউআর কোড স্ক্যান করে সত্যতা যাচাই করেছে নিউজবাংলা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান নিউজবাংলাকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তিনি কথা বলেছেন। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া করোনা পজেটিভ।
তবে খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্টে যে ব্যক্তিগত ফোন নম্বর আছে, তাতে কল করলে সবুজ নামে একজন রিসিভ করে বলেন, ‘সকাল থেকে আমাকে আরও ১০-১২টি মিডিয়া ফোন করে একই তথ্য জানতে চেয়েছে। কিন্তু আমি তার এই রিপোর্টের বিষয়ে অবগত নই। কেন আমার নাম্বার এখানে দেয়া হয়েছে, সেটাও আমি জানি না।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন রহমান নিউজবাংলাকে জানান, তাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি গতকালও তার নিয়মিত চেকআপের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে শুধু তার ডায়াবেটিসের নমুনা নেয়া হয়েছে। করোনার জন্য কিছু নেয়া হয়নি। তবে সকাল থেকে আমার কাছে এ বিষয়ে জানতে সবাই ফোন দিচ্ছে।’
খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষায় সংযুক্ত কিউআর রিপোর্ট স্ক্যান করলে এটি আসে। ছবি: নিউজবাংলাবিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে এটা তো দলের বিষয় না। উনি যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে সেটি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলতে পারবেন। আমরা দলের মহাসচিবকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিডিডিআরবির পরীক্ষাগারের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোগীর ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করার বিধান আমাদের নেই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বাসায় গিয়ে চিকিৎসকদের নমুনা সংগ্রহের পর শনিবারই তার করোনা পরীক্ষার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। আর তখন থেকেই বিষয়টি নাকচ করে আসছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড স্থগিত হওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার বিকেলে বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. মামুন রহমান এই বাসায় যাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করার সংবাদ প্রচার হয়।
এতে বলা হয়, ডা. মামুন ওই বাসায় যাওয়ার আগে ল্যাবএইড হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মো. সবুজ বিএনপি নেত্রীর করোনা পরীক্ষার নমুনা নেন।
তবে চিকিৎসক মামুন রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর খান নিউজবাংলাকে বলেন, এই তথ্য সঠিক নয়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ বাসায় যাননি।
শায়রুল কবীর খান বলেছিলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। এ সময় তার ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা নেয়া হয়। ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর কিছু নয়।’
২০২০ সালের মার্চে সাজা স্থগিতের পর থেকে খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অবস্থান করছেন। ছবি: নিউজবাংলা
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর বিএনপি নেত্রী কারাগারে যান। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে করে ১০ বছর। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।