সাউথ আফ্রিকা থেকে ছড়ানো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাসের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে করোনার এই ধরনে অনেকটা অকার্যকর ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত টিকাও।
সারা বিশ্বে যখন করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে তখন ফাইজারের টিকা নিয়ে এই হতাশাজনক তথ্য উঠে এলো ইসরায়েলের এক গবেষণায়।
যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে গত বছর শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন ধরন। গবেষণায় জানা যায়, নতুন ধরনগুলো এরই মধ্যে মহামারি আকার ধারণ করা কোভিড-১৯-এর চেয়ে বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। এরপর থেকেই প্রশ্ন ওঠে, এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান টিকাগুলো কতটা কার্যকর।
সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা খুব একটা কার্যকর নয় বলে এই টিকার প্রয়োগ স্থগিত করেছে সাউথ আফ্রিকা সরকার। তবে শুরু থেকেই ফাইজার বলে আসছিল, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের টিকা করোনার নতুন ধরনগুলোর ক্ষেত্রেও কার্যকর।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তেল আবিব ইউনিভার্সিটি ও ইসরায়েলের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ক্লালিত ফাইজারের টিকা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। এতে দেখা যায়, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে মানবদেহে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার গড়ে তোলা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ‘ভেঙে ফেলতে’ সক্ষম সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি।
৮০০ মানুষকে দুই দলে ভাগ করে গবেষণাটি চালানো হয়, যাদের সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ৪০০ জন ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার এক অথবা দুই ডোজ নেয়ার ১৪ দিন বা আরও বেশি সময় পরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। বাকি ৪০০ জন টিকাটি নেননি এবং করোনা পজিটিভ হয়েছেন। গবেষণায় বয়স, লিঙ্গ ও অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্যভেদে এই দুই দলের করোনা রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষকরা জানান, এই ৮০০ করোনা রোগীর ১ শতাংশের দেহে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রজাতি বি.ওয়ান,থ্রি-ফাইভ-ওয়ানের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
চিন্তার বিষয় হলো, যারা দুই ডোজ টিকাই নিয়েছেন, তাদের মধ্যে সাউথ আফ্রিকান ধরনের সংক্রমণ টিকা না নেয়া ব্যক্তিদের চেয়েও ৮ গুণ বেশি। যেখানে টিকা না নেয়া করোনা রোগীদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রজাতিতে আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে ফাইজার-বায়োএনটেকের দুই ডোজ টিকা নিয়ে এ প্রজাতিতে আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থাৎ কোভিড-১৯ ও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া আরও একটি নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের তুলনায় সাউথ আফ্রিকান প্রজাতিটির ওপর এ টিকার কার্যকারিতা খুবই কম বলে জানিয়েছেন তেল আবিব ইউনিভার্সিটির অ্যাডি স্টার্ন।
যদিও তারা বলছেন, গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ফাইজার-বায়োএনটেক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথ গবেষণার ভিত্তিতে জানিয়েছিল, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তাদের টিকার কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ।
৯৩ লাখ মানুষের দেশ ইসরায়েলে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ। প্রাণহানি ৬ হাজারের বেশি। অন্যান্য দেশের তুলনায় ইসরায়েলে মহামারি অনেকটি নিয়ন্ত্রণে। দেশটির ৫৩ শতাংশ মানুষ ফাইজার-বায়োএনটেকের দুই ডোজের টিকাই নিয়েছেন।