করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকার পর্যাপ্ত মজুত না থাকলেও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
তবে প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকা এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে মজুত নেই। নতুন করে টিকা পাওয়া নিয়েও রয়েছে আশঙ্কা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে টিকাগ্রহীতাদের এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এক হাজার কেন্দ্রে একযোগে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি নতুন টিকাগ্রহীতারা টিকা নিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ছুটির দিনে টিকাদান বন্ধ থাকবে। দ্বিতীয় ডোজ চলমান থাকা অবস্থায় টিকা চলে আসবে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি, ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন কমিটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবাই মিলে পরামর্শ দিয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ ৮ সপ্তাহ পর গ্রহণ করলে ভালো হয়। সেই পরামর্শ থেকেই বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হচ্ছে।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ৩ কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত বছর নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তির আওতায় দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।
ভারত সরকারের দুই দফা উপহারের ৩২ লাখ ডোজ মিলে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা আসে দেশে। এ পর্যন্ত মোট ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৪ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য ৪২ লাখ টিকা রাখা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত নিজস্ব চাহিদার কথা বিবেচনা করে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার রপ্তানি গত ২৪ মার্চ স্থগিত করে। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত টিকা রপ্তানি বিলম্বিত হতে পারে।
কোভ্যাক্সের আওতায় ১৮০টি দেশও সিরাম উৎপাদিত টিকা পাবে। কিন্তু রপ্তানি স্থগিত হওয়ায় এসব দেশও টিকা পাচ্ছে না। ফলে সিরামের কাছ থেকে টিকার নতুন চালান পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
টিকার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম, তিনি নিউজবাংলা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের মধ্যে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চায় সরকার।
সে লক্ষ্যে ৮ এপ্রিল টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হবে। পাশাপাশি অব্যাহত থাকবে প্রথম ডোজ টিকার কার্যক্রম।
লকডাউন ও রমজানে কীভাবে চলবে টিকা কার্যক্রম, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গত সোমবার সভা হয়। ওই সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রথম ডোজের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজের জন্য টিকাগ্রহীতাদের এসএমএস দেয়া হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রের নাম উল্লেখ থাকবে।
গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে জেলায় জেলায় টিকা পাঠানো হয়। জেলায় জেলায় গঠিত টিকা কমিটি তা গ্রহণ করছে।
তিনি আরও বলেন, রমজানেও চলবে টিকা কার্যক্রম, লকডাউনের মধ্যে টিকা কার্যক্রম চলবে, টিকাগ্রহীতাদের অবশ্যই টিকা কার্ড সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। টিকা কার্ড দেখালে তারা রিকশা কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন।
টিকার কোনো সংকট হবে না জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘কেনা টিকার ৩০ লাখ ডোজ এপ্রিলের মধ্যে আসবে। যে পরিমাণ টিকা আছে সেটা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে। আশা করছি মে মাসে কোভ্যাক্সের টিকা পেয়ে যাব। আবার ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও হয়তো উঠে যাবে। তাই আমি বলব টিকার কোনো সংকট হবে না।’