চুক্তি অনুযায়ী কেনা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পেতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।
মার্চের শেষ সপ্তাহে এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি জানান, চিঠির জবাব এখনও আসেনি।
স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকের আশা, চলতি মাসেই আসবে কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান।
তিনি মঙ্গলবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম ডোজের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হবে। দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রয়োগের জন্য ৪২ লাখ টিকা মজুত রয়েছে। এই টিকা দিয়েই লকডাউন ও রমজানে টিকা প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে।
‘টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এই মাসেই টিকার দ্বিতীয় চালান নিশ্চিতে উৎপাদন সংস্থা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই টিকা দ্রুত আসবে বলে আশা করছি। চলতি মাসে পাওয়া যাবে।’
তবে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত নিজস্ব চাহিদার কথা বিবেচনা করে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার রপ্তানি গত ২৪ মার্চ স্থগিত করে।
ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত টিকা রপ্তানি বিলম্বিত হতে পারে।
কোভ্যাক্সের আওতায় ১৮০টি দেশও সিরাম উৎপাদিত টিকা পাবে। কিন্তু রপ্তানি স্থগিত হওয়ায় এসব দেশও টিকা পাচ্ছে না।
টিকা পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা পাঠানো নিশ্চিত করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা হয়েছে বলে ২৬ মার্চ একটি অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছিলেন, ‘মার্চে টিকার দ্বিতীয় চালান আসার কথা ছিল; তবে আসেনি। টিকার অর্ডার করা চালান আমরা পাইনি। এই বিষয়ে ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা হয়েছে।
‘এ ব্যাপারে ভারতকে ব্যবস্থা নিতে বৈঠকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যদি (টিকা) পেয়ে যাই তাহলে কর্যক্রম ব্যাহত হবে না। না হলে অন্য সোর্স খুঁজতে হবে।’
টিকাদানে সংকটের শঙ্কা
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে চলতি মাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার নতুন চালান না এলে টিকাদানে সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকা উৎপাদন কেন্দ্র। ফাইল ছবি
অধিদপ্তর জানিয়েছে, টিকাগ্রহীতাদের দ্বিতীয় ডোজের মজুত থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্সের টিকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সেটা নিয়েও নিশ্চিত তথ্য নেই সরকারের কাছে। এ রকম পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করছেন, জুলাইয়ের মধ্যে ২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
দেশে কেনা টিকার সবশেষ টিকার চালান এসেছে ২২ ফেব্রুয়ারি। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর শুরুর দিন ২৫ মার্চ উপহারের টিকার ১২ লাখ ডোজ নিয়ে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কোন চালানে কত ডোজ
সিরামের সঙ্গে বেক্সিমকো তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা থাকলেও ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে আসে ২০ লাখ ডোজ।
সংকটের কারণ দেখিয়ে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ৩০ লাখ ডোজ কম পাঠিয়েছে। তবে ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে পুরো ৫০ লাখ টিকা পাঠিয়েছিল সিরাম।
২২ ফেব্রুয়ারির চালানে টিকা কম আসা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, মার্চে টিকার চালানে আগের ৩০ লাখ পূরণ করে দেবে সিরাম। কিন্তু আগের ঘাটতি তো দূরের কথা, নতুন চালানও আসেনি।
সব মিলিয়ে টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। এ পর্যন্ত মোট ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৪ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন।
টিকার অপেক্ষা
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, সিরাম কর্তৃপক্ষ ব্রাজিল, সৌদি আরব ও মরক্কো সরকারকে টিকা দিতে দেরি হবে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। কারণ হিসেবে ভারতে টিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে তারা।
এই তিন দেশ এরই মধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকার প্রথম চালান পেয়ে দ্বিতীয়টির অপেক্ষায় আছে। তবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি সিরাম।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘কেনা টিকার ৩০ লাখ ডোজ এপ্রিলের মধ্যে আসবে। যে পরিমাণ টিকা আছে সেটা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে।
‘আশা করছি মে মাসে কোভ্যাক্সের টিকা পেয়ে যাব। আবার ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও হয়তো উঠে যাবে। তাই আমি বলব টিকার কোনো সংকট হবে না।’
টিকা কেনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিঠি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা। তবে টিকার দ্বিতীয় চালান কবে আসছে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না।’