বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসপাতালে রোগীর চাপে দিশেহারা চিকিৎসক

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:৫৯

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ঢাকা মেডিক্যালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন সাড়ে ৪০০ ডাক্তার, তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল। বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে সাধারণ বেড প্রায় পরিপূর্ণ, আইসিইউ-এর জন্য চলছে হাহাকার।

করোনা রোগীদের সেবা দেয়া চিকিৎসক ও নার্সরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, ফলে সংকটের মাত্রা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে করোনা শয্যার পাশাপাশি আইসিইউ সেবা বাড়াতে হবে। তা না হলে জটিল রোগীদের বাঁচানো কঠিন।

রাজধানীতে প্রধান কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কেমন চলছে এবং সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে নিউজবাংলা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনেক চিকিৎসকও আক্রান্ত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক মাসের ব্যবধানে কয়েক গুণ বেড়েছে। গত এক মাসে সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০০ জনের বেশি। রোববারের হিসাব অনুযায়ী, ৭০৫ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন এই হাসপাতালে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় ভর্তি করার পর তাদের বেড নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ৮৮৩টি কোভিড বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ৭০৫টিতে। করোনা চিকিৎসায় বেশি প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউর। সবাই বাসা থেকে চিকিৎসা নেয়ার কারণে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখনই অক্সিজেন, আইসিইউর প্রয়োজন পড়ে, তবে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত আইসিইউ নাই।’

তিনি জানান, হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র একটি বেড খালি আছে৷ যে হারে করোনা রোগী আসছে, তাতে ভবিষ্যতে সব রোগীকে চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ঢাকা মেডিক্যালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন সাড়ে ৪০০ ডাক্তার, তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন।’

পরিস্থিতি এ ভাবে চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসক সংকট দেখা দিতে পারে মন্তব্য করে সবার স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক।

মুগদা হাসপাতালে দ্বিগুণের বেশি রোগী

ঢাকা মেডিক্যালের মতো মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও রোগী বাড়ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে দ্বিগুণের বেশি রোগী বেড়েছে।

এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩১০টি বেড, যার কোনোটি এখন খালি নেই। এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯টি, সেগুলোও পরিপূর্ণ।

মুগদা হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন গুলশানের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী আলমগীর হোসেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ১৯ মার্চ ভর্তি হন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থা বিবেচনায় সম্প্রতি তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসক, তবে সে সময় ওই হাসপাতালে কোনো আইসিইউ ফাঁকা ছিল না।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে স্বজনেরা খোঁজ নিয়েও কোথাও আইসিইউ ফাঁকা পাননি। এ অবস্থায় আলমগীরের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই তার জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা হয়।

হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে ১৯টি আইসিইউ শয্যার প্রতিটিতে সার্বক্ষণিক রোগী থাকছেন।’

মুগদা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীরা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

তিনি বলেন, ‘আইসিইউ সংকট নিরসনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। গত এক মাস বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে আইসিইউ রোগীর জন্য, যা দুই মাস আগেও অনেক কম ছিল।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রোগীর স্রোত

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে করোনা রোগী অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন ৫০-এর বেশি রোগী আসছেন এই হাসপাতালে।

হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে রোগিকে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

রোগীর চাপ সামলাতে এই হাসপাতালে শনিবার নতুন ১০০টি বেড সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১০টি আইসিইউ শয্যা। এই হাসপাতালে রোববার ২৫০টি বেডের মধ্যে ২৩১ বেডে রোগী ছিলেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাড়তি রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তারদের। ইতোমধ্যে কিছু ডাক্তার করোনা আইসোলেশনে চলে গেছেন। এখানে ১০টি আইসিইউ বেড চালু হওয়ার পরপরই তিনজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী

করোনার শুরু থেকে চিকিৎসা দেয়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এখন রোগীর চাপ সব চেয়ে বেশি। এই হাসপাতালে করোনা রোগী চিকিৎসায় বেড রয়েছে ২৭৫টি, আর রোববার রোগী ভর্তি ছিলেন ৪২০ জন।

হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ বেডের কোনোটিই খালি নেই। অতিরিক্ত চাপের কারণে নতুন কোনো রোগীকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। অনেকেই হাসপাতালে আসছেন, তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স পাচ্ছি না। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। জনবল না পেলে আমরা কীভাবে রোগীদের সেবা দেব। রোগী রাখলেই তো হবে না। তাদের প্রয়োজনীয় সেবাটুকু দিতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাপ বাড়ছেই

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ বেড়েই চলছে। এই ইউনিটে ২৪০ রোগী ভর্তির সুযোগ রয়েছে, সেখানে এখন রোগী আছেন ১৮৬ জন। এছাড়া ১৬টি আইসিইউ বেডও পূর্ণ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা দেশেই সংক্রমণ বেড়েছে, এর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়েছে। আমাদের হাসপাতালও এর ব্যতিক্রম নেই। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে এভাবে চলতে থাকলে সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হবে। ’

এ বিভাগের আরো খবর