সারা দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা থাকলেও মানুষের জীবনকেই এগিয়ে রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) প্রধান কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোববার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ মনোভাবের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির মন্দাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে আমরা কিন্তু গতিটা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। প্রবৃদ্ধি অর্জনেও অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে…দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। আমাদের সেটা ধরে রাখতে হবে।
‘কিন্তু সাথে সাথে আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন সচল থাকে এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন। তবে মানুষের জীবনটা আগে। কারণ জীবন যদি না বাঁচে তাহলে আমাদের অর্থনীতিই বা কী আর রাজনীতিই বা কী। কাজেই মানুষের জীবন আগে বাঁচাতে হবে।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিয়ম-নীতিগুলো মেনে চলা এবং সেভাবে নিজেকে সুরক্ষিত করা এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখা। এটা অবশ্যই সকলকে করতে হবে।
‘আমরা ইতিমধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। এই নির্দেশনা যাতে যথাযথভাবে মানুষ পালন করে সেটিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
এ সময় করোনা নিয়ন্ত্রণে এনএসআই সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি আজকে বিশ্বব্যাপী একটা বিরাট সমস্যা। অর্থনীতি প্রায় স্থবির, মানুষের জীবনযাত্রাও স্থবির। হয়তো আমরা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রেখে যখন একটু মানুষের জীবন সচল করলাম, তখন আবার নতুন করে দ্বিতীয় দফায় এই করোনা দেখা দিয়েছে।
‘করোনা ব্যবস্থাপনায়ও আপনারা অতীতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বর্তমানে যে অবস্থাটা চলছে সেখানেও আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বেই একই অবস্থা। আপনাদের আরও দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
সশরীরে না আসতে পারার আক্ষেপ
অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত না থাকতে পারায় দুঃখও প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। এ সময় এনএসআইয়ের নবনির্মিত ভবনটি মুজিববর্ষের উপহার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের সরকারগুলো এনএসআইকে রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি করতে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, ‘এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। এক যুগ আগের বাংলাদেশের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের অনেক পার্থক্য। এই করোনার মধ্যেও আমরা এই অর্থনীতির গতিটা সচল রাখতে পেরেছিলাম। বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করে আজকের বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন মাত্র সাড়ে ৩ বছরে।
‘সেখানে থেকে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশে আমরা যে উন্নীত হয়েছি তার ধারাবাহিকতা আমাদের বজায় রাখতে হবে। আর সেটা সেটা বজায় রাখতে গেলে দেশে যেমন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে, করোনা মোকাবেলা করতে হবে, সেই সাথে অর্থনীতির গতিশীলতাও অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথা সবাইকে স্পষ্ট করে বলতে চাই। এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাৎ।
‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ফিরিয়ে এনেছি’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময়, বিশেষ করে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বাঙালি জাতিকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করেছিল এবং বাংলাদেশকেও ভিক্ষা চাওয়ার অভ্যাসে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশ বললেও সারা বিশ্ব বলত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা দুর্ভিক্ষ, প্রতিনিয়ত হাত পাতা। এটাই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ তা নয়।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ ছিল, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত করা হয়েছিল। সেই আদর্শ হারিয়ে গিয়েছিল।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার আমরা সেই আদর্শকে ফিরিয়ে এনেছি এবং তারই দেখানো পথ ধরে এগিয়ে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের কাছে মর্যাদা নিয়ে চলে। বাঙালি জাতি এখন সারা বিশ্বে মর্যাদা অর্জন করেছে। সেই মর্যাদা ধরে রাখা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
‘মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’
বক্তব্যে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে এনএসআই সদস্যদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় আপনাদের লক্ষ রাখতে হবে। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি এবং এসব ব্যপারে আপনাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘জনগণের জনমাল রক্ষা করা, জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করণীয় সেটা আপনাদের করতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক বা দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। সেই বিষয়ে অবশ্যই আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
এ সময় এনএসআইয়ের প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সততা নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। করোনা বাধার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। যদিও করোনা মহামারি হয়তো কিছুটা বাধা সৃষ্টি করবে। কিন্তু এখান থেকেও আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব।
‘ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন আমরা দেয়া শুরু করেছি। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’